
রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা হয়েছে। একমাস আগে সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষর করা ওই কমিটি ঘোষণা হয়েছে ১৩ মার্চ বুধবার দিবাগত রাতে। ওই কমিটি ঘোষনা নিয়ে চলছে বিতর্ক।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিগুলোতে স্থান পেয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্র কারবারি ও মাদক ব্যবসায়ী। এ নিয়ে সংগঠনে চলছে চরম বিরোধ।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের এক সিদ্ধান্তে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখান করেছেন কমিটির অন্যান্য নেতারা। ১৪ জনের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে অবিলম্বে রাতে আঁধারে ঘোষিত বির্তকিত কমিটি বাতিলের দাবী জানান।
এছাড়া শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সংম্মেলনে অভিযোগ করা হয়- একই ব্যক্তিকে থানা ও ওয়ার্ড উভয় কমিটিতে রাখাসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িত নেতাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেওয়া হয়েছে। তাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিরাপদ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও সুজিত দাশ বলেন, আমাদের পক্ষেও ওনাদের সঙ্গে একযোগে সাংগঠনিক কাজ চালানো সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনুরোধ চলমান সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনকে রক্ষা করবেন এবং হাজার হাজার ত্যাগী যোগ্যতা সম্পন্ন নেতা কর্মীদের প্রিয় সংগঠনে কাজ করার সুযোগ করে দিবেন। অন্যথায় এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সকল কর্মীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে যে কোন পদক্ষেপ নিতে আমরা বাধ্য হবো।
তিনি আরও বলেন, ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের মাধ্যমে সংগঠনের ক্ষতি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে দূর্বল করেছেন। এর মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে উনারা উনাদের পদের যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা মনে করি বিতর্কিত কমিটিসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মূল গঠনতন্ত্র এর ধারা ৮, ২২, ২৩, ২৬, ২৭ এবং ৩৪ (খ) এর লঙ্ঘন করা হয়েছে। এসব কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এই অবস্থায় সকল কমিটি বাতিল করা অত্যন্ত যুক্তি সংগত। বাস্তবিক অর্থে আমরা বিশ্বাস করি মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই অদৃশ্য শক্তির ইন্দনে হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, অস্ত্র ও মাদক ব্যাবসায়ীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার মিশনে নেমেছেন। ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের মাধ্যমে সংগঠনের ক্ষতি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে দূর্বল করেছেন।
এসময় বিক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, সবাই যখন নিশিযাপন করছে, তখন ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি থানা ও ১২টি ওয়ার্ড কমিটির তালিকা ভাইরাল করে নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক কাজ করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক সংগঠনের কোন প্রতিষ্ঠিত কমিটি প্রকাশ করার প্রথম ধাপ হলো গণমাধ্যম প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া।
খবর নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ জুলাই ৩৯ কেজি গাঁজাসহ নগরীর হালিশহর থানা এলাকা থেকে মো. সোহেলকে (২৯) আটক করে র্যাব-৭। তিনি পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা চরবস্তি এলাকার মৃত. মো. ইদ্রিসের ছেলে। গাঁজাসহ আটকের পরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনদিনের মাথায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। কারণ তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদকের। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে মাদক কারবার করা ওই যুবককেও আনা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটিতে।
তাকে দক্ষিণ পতেঙ্গা ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ বুধবার দিবাগত রাতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ তাদের নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে কমিটির তালিকাগুলো প্রকাশ করেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে থানা পর্যায়ে ৭১ সদস্য ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঘোষিত কমিটিগুলোতে কিছু পদ খালি রাখা হয়েছে। আগামী তিন বছরের জন্য ঘোষিত হয়েছে এসব কমিটি। থানার মধ্যে ঘোষণা করা হয় চান্দগাঁও, চকবাজার, পতেঙ্গা, সদরঘাট, বন্দর, পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানা কমিটি।
অন্যদিকে ১২টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে বাগমনিরাম ওয়ার্ড, চকবাজার, উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা, পশ্চিম মাদারবাড়ি, পূর্ব মাদারবাড়ি, গোসাইলডাঙ্গা, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর , দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, উত্তর পাহাড়তলী ও উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়।