টাকার অঙ্কে দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিউক্লিয়ার ক্লাবে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। রুশ রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হওয়া এই প্রকল্প চালাতে এখনও রাশিয়ানদের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ।
দীর্ঘমেয়াদে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা যাতে বাংলাদেশিরা করতে পারে, সেজন্য সরকারি খরচে রাশিয়ায় অনার্স ও মাস্টার্স করতে কয়েকটি ব্যাচে পাঠানো হয় ৯০ শিক্ষার্থীকে। তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল রুশ ভাষা শিক্ষা। চুক্তি ছিল রশিয়ায় পড়াকালে বা ফিরে এসে দেশি বা বিদেশি অন্য কোনো সংস্থায় শুরুতেই চাকরি করতে পারবেন না তারা।
কিন্তু কথা রাখেনি আওয়ামী লীগ সরকার। নিউক্লিয়ার সায়েন্সে বিদেশি ডিগ্রিধারী ৪৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়নি এই প্রকল্পে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতিসহ নানা কারণে অনেককে নিয়োগ দেয়া হয়।
নিউক্লিয়ার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি থাকা এমন তরুণদের নিয়োগ না দেয়াকে বড় ধরনের প্রতারণা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি এটাকে দক্ষ জনশক্তির অপচয়ও বলছেন তারা। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন বঞ্চিত তরুণ পরমাণু বিজ্ঞানীরা।
এ নিয়ে নিয়োগ বঞ্চিত একজন বলেন, কথা ছিল আসার পর এখানে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে। তবে এখনও আমরা নিয়োগ বঞ্চিত। আরেকজন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে আমরা বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছি। কিন্তু নিয়োগ পাইনি। সরকার আমাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলো, অথচ মেধা প্রয়োগ করতে পারলাম না। এটি কি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় নয়?
যদিও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার বিধি মেনেই চালানোর কথা এই প্রকল্প। তাদের গাইডলাইনেও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে তাত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান না থাকলে তাদের নিয়োগ দেয়ার বিধান নেই। ক্ষমতাচ্যূত সরকারের মন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি লিখে বিদেশি ডিগ্রিধারী বাংলাদেশিদের নিয়োগ দেয়ার তাগিদ দেয় রোসাটম।
এদিকে, রাষ্ট্রীয় খরচে যে দক্ষ জনবল তৈরি হলো, তাদের কেন পারমাণবিক প্রকল্পের কাজে লাগানো হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদেরকে কেন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না সেটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এ ধরনের বিশেষজ্ঞদের বসিয়ে রাখাটা দেশের জন্য অপচয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলক্ট্রেনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, নিউক্লিয়ার বিষয়ে যাদের জ্ঞান নেই তারা এই প্রকল্পে অযোগ্য। এমন অযোগ্য লোক দিয়ে তো পারমাণবিক প্রকল্প চালানো যায় না। নিজ দেশের এসব প্রশিক্ষিত লোককে সুযোগ না দিলে বাইর থেকে লোক আনতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যয়টা আরও বাড়বে। পাশাপাশি এটি বিপজ্জনকও বটে।
প্রায় সাড়ে ছয় বছর রাশিয়ায় পড়াশোনা করে আসা এই তরুণদের অনেকেই এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কিন্তু পারমাণবিক প্রকল্পে কাজ করার যে চুক্তি সরকার তাদের সাথে করেছিল, তা না মানায় হতাশ তারা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।