নির্বাচনী কর্মকর্তার উপর হামলাকারী বাঁশখালির সরকার দলীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাচনী মনিটরিং সেলের টিম লিডার মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের নিজ বাসভবন ডালিয়াকুঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানিয়ে মীর নাছির একজন নির্বাচন কর্মকর্তার উপর হামলার পরও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, কমিশন তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই কমিশন চরম বেহায়া ও অর্থব। আর এই কারণেই এখন তাদের উপর আক্রমন হয়েছে। একজন নির্বাচন কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পরও কমিশন তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তাদের উচিত ছিল ওইদিনই এমপিকে গ্রেফতার করা। এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করারও দাবি জানান।
সাতকানিয়ার সরকার দলীয় এমপি নদভীও তার নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে জানিয়ে তিনি বলেন তার নির্দেশে বিএনপির প্রার্থীদের থানার ওসি হয়রানী করছে। একজন প্রার্থীকে থানায় ডেকে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি ৬ ঘন্টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহার এবং ভোটের দিন এমপি নদভী যাতে সাতকানিয়ার ত্রিসীমানায় যেতে না পারে সে পদক্ষেপ দিতে কমিশনের প্রতি দাবি জানান।
সংবাদ মীর নাছির বলেন, ইউপি নির্বাচনের শুরু থেকে অনিয়ম, ভোট চুরি ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তারা তাদের সাংবিধানিক কোন ক্ষমতাই প্রয়োগ করেনি। ফলে নির্বাচনের নামে জঘন্য এক প্রহসনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটের নামে যে প্রহসনের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে তার মধ্যদিয়ে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ভুলন্ঠিত করা হয়েছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জেনেও বিএনপি ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির কর্মীরা ধানের শীষ নিয়ে জনগনের কাছে গিয়েছে। আমরা দেখেছি গ্রামের মানুষ এখনও ধানের শীষের পক্ষে। গণমানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলেও তাদের হৃদয়ে এখন ধানের শীষ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখনও জনগণ বিএনপিকে বেছে নিবে।
গত কয়েকদিন ধরে পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ ৭ উপজেলায় চলমান সহিংসতা, হামলা, অস্ত্রের মহড়া, পুলিশী অভিযান ও হয়রানির বিশাদ চিত্র তুলে ধরে মীর নাছির বলেন, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বহিরাগত অস্ত্রধারীরা যেভাবে প্রকাশ্যে হুমকী-ধমকী দিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামীকাল মা-বোনেরা নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা, ভোটারগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা এবং নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
তিনি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষার পরিবর্তে তাদেরকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বলেন, সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে ধানের শীষের জোয়ার বইছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৭ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীরা জয়লাভ করবে। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের প্রশাসন নির্লজ্জ্বভাবে স্থানীয় এম.পি, মন্ত্রীদের প্রভাবে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি সাতকানিয়া উপজেলায় বিনা ভোটের এমপি তার নিজের ভাতিজার নৌকা প্রতীকের একতরফা নির্বাচনের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে থানায় ডেকে নিয়ে হুমকী দেওয়া, প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ প্রভাব দেখানোর অভিযোগ তুলে বলেন, পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীর উপর হামলাসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে মামলা, প্রার্থীসহ ছনহরা ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের উপর রক্তাক্ত হামলা, গ্রেফতার, বড়লিয়া ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করেছে, প্রচার-প্রচারণায় হামলা করেছে, ২২ নেতাকর্মীকে আহত করেছে, পুলিশ স্থানীয় এম.পির নির্দেশে উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানী করছে, নৌকার প্রার্থী সানু নিজেই তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী।
কুসুমপুরা ইউনিয়নে একই কায়দায় বিএনপি প্রার্থীর মনসা চৌমুহনীস্থ কার্যালয় ভাংচুর করেছে। প্রচার-প্রচারণায় হামলা করেছে। স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন বড়ুয়া সন্ত্রাসের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। হাবলাইশ দ্বীপ ইউনিয়নে স্থানীয় এমপির ছেলে প্রকাশ্যে হুমকী দিচ্ছে। নিরহ কর্মীদের ধরে পুলিশে দিচ্ছে। পুলিশ পেনডিং মামলায় চালান দিচ্ছে। ৮নং কাশিয়াইশ ইউনিয়নে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে নেতাকর্মীদেরকে হয়রানী করছে।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মো.মহিউদ্দিন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।