গ্যাসের দাম অযৌক্তিক ভাবে বৃদ্ধি প্রতিবাদে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির মোড়ে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশী বাধার মুখে পরে স্থান বদল করে মিছিল নিয়ে শত শত নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনেই জড়ো হয়। সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আজ শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
জানাগেছে, দফায় দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামে চাহিদার বিপরীতে সল্পমাত্রার গ্যাস সরবরাহের প্রতিবাদে শনিবার বিকালে কাজীর দেউড়ি মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।

সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকে নগরীর ৪১ ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারের সামনে সড়কে সড়কের উপর জড়ো হতে থাকে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির নেতারা সমাবেশে উপস্থিত হলে সিএমপির কর্মকর্তরা সড়কের উপর সমাবেশ করা যাবে না বলে বাধা দিতে থাকেন। এসময় নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ চালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে পুলিশের সাখে তর্ক বির্তকের সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ধাক্কাধাক্কি চলে বেশ কিছুক্ষণ। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সমাবেশ করতে না পেরে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নূর আহমদ সড়কের দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে চলে আসে সেখাই ৫টার দিকে সমাবেশ শুরু হলে একে একে বত্তব্য দেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাৎ হোসেন, সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, মো মিয়া ভোলা, এম এ আজিজসহ অন্যান্য নেতারা।

ঘটনার সময় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উদ্দিন বলেন সড়ক অবরোধ করে কোন সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
তাই বিএনপির সমাবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে দলের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশ করতে।
এদিকে নাসিমন ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, অবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে। আর এ আন্দোলন হবে সরকার পতনের আন্দোলন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রামকে এ সরকার সকল দিক দিয়ে কোনঠাসা এবং অবহেলিত করে রেখেছে। ঢাকাতে অসংখ্য পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামে মাত্র একটি পাইপের মাধ্যমে কলকাখানা এবং বাসাবাড়িতে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। তাও প্রযোজনীতার তুলনায় অনেক কম।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি সবসময় জনস্বার্থ বিরোধী কমর্কান্ডের প্রতিবাদে যে কোন কর্মসূচিতে জনগণের পাশে থাকে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে। গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে সরকারের জনবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাতে বিএনপি অন্দোলন করছে।
শাহাদাত বলেন, আমরা চাই না পুলিশের সঙ্গে আমাদের কোন সংঘাত সৃষ্টি হোক। এই রাষ্ট্র পুলিশী রাষ্ট্র হোক এটা আমরা চাই না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার সবার আছে। আমরা পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জনগণের পকেট রাজস্ব বাড়ানোর অযৌক্তিক পদক্ষেপ নিচ্ছে বারংবার। সরকার গরীব মানুষদেরও ভ্যাটের আওতায় এনেছে। জনগণ এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে ত্রাহি অবস্থায় রয়েছে। আবারো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জনগণের জন্য ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের পছন্দের কিছু লোক লাভবান হবে ঠিকই, কিন্তু জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, সরকার বিএনপিকে জাসদ-বাসদ মত দল মনে করেছে। তাই বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে নয়। আমরা প্রশাসনকে সম্মান করতে চাই। কিন্তু প্রশাসন যদি গণবিরোধী আচরণ করে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি অবশ্যই প্রতিবাদ করবে।
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করছে। মানুষের ভোটাধিকার, সভা সমাবেশের অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা আজ বুলণ্ঠিত। দেশের মানুষ আজ দিশাহারা। সরকারের অন্যায় অত্যচার ও দুর্নীতির কথা দেশের জনগণকে জানানোর সভা সমাবেশের যে মৌলিক অধিকার তাও পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা মোঃ মিয়া ভোলা, এম.এ. আজিজ, মোঃ আলী, এস.এম. সাইফুল আলম, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, কাজী বেলাল উদ্দিন, ফরিদ আহমেদ বিএ, ইস্কান্দর মির্জা, সবুক্তগীন ছিদ্দিকী মুক্কী, সামশুল আলম, ইকবাল চৌধুরী, মোশারফ হোসেন ডিপ্তি, আর.ইউ.চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আনোয়ার হোসেন লিপু, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আব্দুল মান্নান, ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জি.এম. আইয়ুব খান, মোঃ সালাহ উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুব আলম, কামরুল ইসলাম, গাজী মোঃ সিরাজ উল্লাহ, সিহাব উদ্দিন মোবিন, এইচ.এম. রাশেদ খান, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মোশারফ হোসেন ডিপটি, মঞ্জুর রহমান চৌধুরী, আকতার খান, এস.এম. জি আকবর, মোঃ সালাহ উদ্দিন, হাজী মোঃ মহসিন, সাবেক কাউন্সিলর মোঃ সেকান্দর, শরফরাজ কাদের রাসেল, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, জাহেদুল হাসান, হাজী মোঃ বেলাল হোসেন, হাজী মোঃ তৈয়ব, দিদারুর রহমান লাভু, এস.এম ফরিদুল আলম, জাহাঙ্গীর আলম, আশরাফ উদ্দিন, এম.এ. হালিম বাবলু, নুর হোসেন, এস.এম. মফিজ উল্লাহ, জামাল আহমেদ, আলহাজ্ব জাকির হোসেন, আব্দুল্লাহ আল ছগির, তৌহিদুস সালাম নিশাদ, সাইফুর রহমান শপথ, হাজী মোঃ ইলিয়াছ,এম.আই. চৌধুরী মামুন, সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
নাসিমন ভবনে সমাবেশ চলাকালে বাইরে রাস্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।