চার ঘণ্টা অবরোধের পর লং মার্চের ঘোষণা দিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীর শাহবাগ সড়ক ছেড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতরা। তবে কবে লং মার্চ করবেন, এ বিষয়ে তাঁরা কোনো ঘোষণা দেননি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারিত তারিখ জানানো হবে বলেছেন বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া একজন।
নিজেকে অভ্যুত্থানে আহত দাবি করে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচিতে থাকা আন্দোলনকারীদের এক নেতা আরমান হ্যান্ডমাইকে বলেন, আমরা তিন দাবিতে লং মার্চ করব।
আহতরা এতে অংশ নেবেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা তারিখ ঘোষণা করব।
আহত বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন জানান, দুই ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও হটলাইন নম্বর চালু করার দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নেমে এসেছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত দাবি করে সুমন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আহতদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।
এর মধ্যে দুই ক্যাটাগরি ভাতা পাবে, বাকিরা পাবে না। এটা বৈষম্য। আমরা চাই দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ভাতা প্রদান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও হটলাইন নম্বর চালু করা হোক।
এর আগে গতকাল দুপুর আড়াইটার পর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় অবরোধ করেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতরা।
পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন। এরপর দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকা গাড়ি চলতে শুরু করে।
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালেদ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, লং মার্চ করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে আহতরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। এর আগে শাহবাগ মোড় থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল সড়কে অবস্থান নিয়েছিল ২০ থেকে ২৫ জন আহত ব্যক্তি। এতে সড়কের এক পাশের গাড়ি চলাচলে সমস্যায় পড়তে হয়।
তবে অপর পাশে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আহতরা অভিহিত হবেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে। প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন পাবে ৩০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে পাবেন অগ্রাধিকার।
‘জুলাই যোদ্ধারা’ দুটি মানদণ্ডে চিকিৎসা পাবেন। গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা। তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে।
গুরুতর আহতরা মাসে মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতাও পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসাসেবা পাবেন। মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশ থাকলে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে দেশের বাইরে। তারা কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধাও পাবেন।
‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এক লাখ এবং পরের অর্থবছরের দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা। তারা মাসে ভাতা পাবেন ১৫ হাজার টাকা। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সরকারি-আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকারও পাবেন তাঁরা। জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা নিতে পারবেন।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন ‘শহীদের তালিকা’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। আহতদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।