আজ সেই ভয়াল ও বীভৎস ২৫শে মার্চ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। একাত্তরের অগ্নিঝরা এদিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি।
এ বছরের ২৫ মার্চ থেকে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ ও জাতীয় সংসদ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
গণহত্যার ভয়াবহতা ও তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এখন থেকেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে আগামী বছর থেকে ব্যাপক পরিসরে দিবসটি পালনসহ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা যে গণহত্যা চালায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রথম শিকার হয় জগন্নাথ হল। এবার প্রথমবারের মতো গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনে জগন্নাথ হলে চলছে নানা আয়োজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও দিবসটি পালনে উদ্যোগ নিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম।
এছাড়া শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থানে ‘গণহত্যা দিবস’ পালনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন। তেইশ বছরের শোষণ বঞ্চনা আর নিপীড়ন থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতেই ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ইতিহাসের বর্বরতম এই হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনে গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ২০ শে মার্চ মন্ত্রিসভাও অনুমোদন দেয়।
উল্লেখ্য, এ রাতে বর্বর পাকবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর এদিন বাঙালি জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের এক নৃশংস বর্বরতা। তখনও কেউ জানে না কী ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় রাত আসছে বাঙালির জীবনে। ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। অকস্মাৎ যেন নরকের সবকটি দরজা খুলে গেল। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ, ট্রাক বোঝাই করে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্য ট্যাঙ্কসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল শহরজুড়ে।
আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের মাধ্যমে পাক জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তান্ডব। হতচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। মানুষের কান্না ও আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে ওঠে শহরের আকাশ।
মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হলো লাশের শহরে। ঢাকা শহরের রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে তারা বাঙালি নিধন শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল অর্ধলক্ষাধিক বাঙালিকে। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক।