সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানার ভিতর থেকে নারীসহ চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার রাতে সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহমেদ।
ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দুই জঙ্গির দেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপর দুই জঙ্গির দেহে বোমা লাগানো থাকায় এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। অভিযান এখনো অব্যাহত আছে। রাতের মধ্যে বাকি দুজনের লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে জানান এ সেনা কর্মকর্তা।
জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভবনের কাছাকাছি পাঠানপাড়া মসজিদের কাছে সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’র সর্বশেষ অবস্থা বর্ণনা করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফখরুল আহসান।
তিনি জানিয়েছেন, ভবনে যে চারটি লাশ তারা পেয়েছেন, এর মথ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ওই বাড়িটিতে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী জঙ্গিই ছিল।
তিনি আরো জানিয়েছেন, ভেতরে অবস্থানরত সম্ভাব্য সব জঙ্গিই নিহত হয়েছে। তার বাড়ির ভিতরে ব্যাপক বিস্ফোরক মজুদ করে রেখেছিল। সেনাবাহিনীর এ অভিযান এখনো শেষ হয়নি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেছেন, ‘ভেতর থেকে তারা (জঙ্গিরা) এক্সপ্লোসিভ ফুটিয়েছে, গ্রেনেড চার্জ করেছে, গুলি করেছে। জঙ্গিরা সুইসাইডাল ভেস্ট পরা ছিল। পুরো বাড়ি কমান্ডোরা তল্লাশি করে দেখেছেন। প্রয়োজনে আরও তল্লাশি করা হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘এখনই অভিযান শেষ করছি না। ভেতর থেকে লাশ বের করা হয়েছে। চার জনের মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন নারী। তবে তারা কখন মারা গেছে, এর ঠিক সময় বলা কঠিন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘নিহতরা কারা, এটা পুলিশ-র্যাব পরে বুঝতে পারবে। পুরো ভবন তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও করা হবে।’
জঙ্গিদের লাশগুলো প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দুটি লাশ পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি ওই ভবনের ভিতরেই রয়েছে। এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেছেন, ‘বাকি দুটি ডেডবডির মধ্যে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো আছে। যে অবস্থায় আছে, তাদেরকে ওইখান থেকে বের করাটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এই ডেডবডিগুলো কীভাবে বের করব, সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করছি।’
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ২৩ মার্চ রাত থেকে পাঁচ তলা ভবনটি ঘিরে রেখেছিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা।
এই অভিযান প্রসঙ্গে সোমবারের ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেছেন, ‘যে চারজন (জঙ্গি) এখানে ছিল, তারা ওয়েল ট্রেইন্ডড। তাদেরকে খুঁজে বের করে যে নিষ্ক্রিয় করা হলো বা হত্যা করা হলো, তা সেনাবাহিনীর জন্য বিশাল বড় সফলতা। দুঃসাহসিক এ অভিযানের জন্য আমরা সকলেই গর্বিত। আপনারও গর্ববোধ করতে পারেন। দেশবাসীর দোয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই খুব সুন্দর, সফলভাবে অভিযানটা চলেছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘পুরো বিল্ডিংটায় যে পরিমাণ এক্সপ্লোসিভ আছে এগুলো যদি বিস্ফোরণ হয় তাহলে এই বিল্ডিংয়ের অংশ বিশেষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যে অবস্থায় আছে, এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এবং সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। এই অপারেশনে আরও হয়ত কিছু সময় লাগতে পারে। আমাদের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বাকি কাজটুকু এগিয়ে নিয়ে যাব।’