বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে প্রশ্রয় দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।
বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
গত ১৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জাসদকে একটি ‘হঠকারী’ সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার জন্য ইনুর দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে দায়ী করেন। এরপরই এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা, প্রতিবাদ জানায় জাসদ। আক্রমণে নেমেছে জাতীয় পার্টি, এবার মুখ খুললো বিএনপিও।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইনুদের মতো কিছু মানুষ যারা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের কারণেই আরও বেশি রক্ত ঝরেছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেই হাসানুল হক ইনুকে (তথ্যমন্ত্রী) আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আমার মনে হয়, তথ্যমন্ত্রী ইনুকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্রয় দেয়ার অর্থই হচ্ছে, তার পিতার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) রক্তের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।’ ইনুকে ‘পঞ্চমবাহিনীর লোক’ বলেও আখ্যা দেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা যদি বায়াত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত হাসানুল ইনুর কর্মকাণ্ডগুলো বিশ্লেষণ করি, তাহলে আজকে এই যে জঙ্গিবাদের উত্থান এর সংজ্ঞা ইনুর কর্মকাণ্ডের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে। আজকে যে উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ, এসব ইনুর কর্মকাণ্ডেরই প্রতিধ্বনি।’
তিনটি প্রসঙ্গ টেনে ইনুর বিচারও দাবি করেন তিনি। প্রথমত ‘বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর সালের কোনো এক সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাওয়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ইনুর নেতৃত্বে জাসদের কিছু লোক নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে গুলি ছোঁড়েন। নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা গুলি ছুড়লে জাসদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়। আর তাদেরকে প্রাণ দিতে হয় ইনুর কারণেই।
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই বাহিনীকে অস্থিতিশীল করতে তখন লিফলেট ছাড়নো এবং নানাবিধ স্লোগান দেয়া হয়। এভাবে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনার সৃষ্টি করা হয়।
তৃতীয়ত, ভারতীয় হাইকমিশনে আক্রমণ। এটি ইনুর মাস্টারপ্লানের অংশ ছিল। অথচ আমাদের দেশে একটি কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও দেশের জনগণের। সেখানে দেশের যদি একটি রাজনৈতিক দল সেই কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা করতে যায়, তাহলে আগ্রাসনকে ত্বরান্বিত করা হয়। এটি একটি ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যেটি বলেছেন সেটা তাদের দলের নেতাকর্মীদের মনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। স্বাধীনতা-উত্তর সারা দেশে যে হত্যালীলা-ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে সেখানে জাসদের একটি অংশের ভূমিকা রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রদলের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, সহ-সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার বসু (মিন্টু) প্রমুখ।