ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

সৌন্দর্যের লীলাভূমি অথচ অবহেলিত আমাদের সীতাকুণ্ড

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।

প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি রূপসী সীতাকুণ্ডে জন্ম গ্রহন করে আমি গর্বিত এবং এর জন্যে আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

সীতাকুণ্ডকে গড়তে হলে এবং এর প্রাকৃকিত সৌন্দর্য ধরে রাখতে জানতে হবে সীতাকুণ্ডের ইতিহাস এবং এর পরিবর্তনের ধারা। এই পরিবর্তন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে খুবই অল্প কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি হয়েছে অনেক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতীয়করনকৃত শিল্পকারখানাগুলো পরিকল্পনার অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে যায়, মুখ থুবড়ে পড়ে এলাকার সার্বিক অর্থনীতি এবং বেকার হয়ে যায় হাজার হাজার স্থানীয় এলাকাবাসী। অর্থনৈতিক এবং ভৌগলিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সত্ত্বেও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর সু নজর কাড়তে ব্যর্থ হয় সীতাকুণ্ড।

.

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অপরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে ভৌগোলিক এবং সামাজিক পরিবেশকে বিবেচনায় না এনে, ফলে তা পরিবেশকে যেমন হুমকির সম্মুখিন করেছে তেমনি ভাবে সমাজের ভেতরেও অবক্ষয়ের বীজ বপন করেছে।

বর্তমান প্রজন্মের যুবসমাজ কায়িক এবং মানসিক পরিশ্রমের পরিবর্তে স্বল্প সময়ে অল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ এবং ক্ষমতা পেতে ইচ্ছুক ফলে পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়, যেমন তারা জমির ব্যবসা, জাহাজ ঘাটের ব্যবসা, ঠিকাধারী ব্যবসায় জড়িত থাকতে পছন্দ করছে। অন্যদিকে রাজধানী থেকে দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশদার হওয়ায় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বার বার ব্যবহার করা হয়েছে সীতাকুণ্ডকে। সীতাকুণ্ডের সামাজিক স্তরবিন্যাস বেশ বৈচিত্রময়। সমাজ বিভক্ত অনেকগুলো দলে (সম্প্রদায়ে)।

.

এলাকার বর্তমান অধিবাসীরা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে আবাস গড়েছে। ভিন্ন ভিন্ন নামে তারা পরিচিত যেমন চট্টগ্রামী, সুন্দিবী, দারাইল্যা, হরাইল্যা, তেলি ইত্যাদি। বর্তমানে এই দলগুলোর মধ্যে সামাজিক ব্যবধান অনেকটা কম হলেও একটা সময় এদের মধ্যে কোন সামাজিক সম্পর্কও হতো না তবে এখনও নির্বাচনের সময় এই বিষয়টি কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করে।

অনেক ধরনের সমস্যা থাকলেও সম্ভাবনাও রয়েছে অপার। পর্যটন শিল্পের বিকাশ সীতাকুণ্ডের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এক সময়ের পুরো ভারতবর্ষ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এখানে আসতো তীর্থ করতে, বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায়। নিরাপত্তা, সুযোগ সুবিধা এবং প্রচারণা বৃদ্ধির মাধ্যমে হারানো সেই দিন গুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব যা সীতাকুন্ডের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কালকারখানা গুলোর জায়গায় পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ বান্ধব শিল্প স্থাপন করতে হবে, নতুন প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলোকে পরিবেশ বান্ধব করতে হবে। শিপব্রেকিং শিল্পকে পরিবেশ বান্ধব করে পূনঃরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পাহাড়গুলোতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয়ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ইকো পার্কে বিনোদন রিসোর্ট করা সম্ভব, নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, ডিগ্রী কলেজকে বিশ্ববিদ্যাল কলেজ করা। চট্টগ্রাম পোর্টের এক্রটেনশন পার্ট প্রতিষ্ঠা করা এবং বেড়ি বাধ দিয়ে বিকল্প হাইওয়ে প্রতিষ্ঠা করা।

.

অবস্থানগত ভাবে গুরুত্বপূর্ন হওয়া স্বত্বেও স্বাধীনতা পরবর্তী সীতাকুণ্ডের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।

মূলত অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্ন্য়নের জন্যে প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্বের। স্বাধীনতা পরবর্র্তী সময়ে সীতাকুন্ডের নেতৃত্বে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে শহরমুখী একটা প্রবণতা বরাবরই কাজ করছে। ফলে সীতাকুন্ড জাতীয় পর্যায়ে অনেক নেতা পেলেও সীতাকুন্ডের পরিকল্পিত উন্নয়নে তারা তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে পারেননি। অন্যদিকে স্বধীনতা- উত্তর এবং স্বধীনতা- পরবর্তী সময়ে যারা ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলো তারা নেতৃত্বে আসেননি বা আসতে পারেননি ফলে নেতৃত্বে একটি বড় শূন্যতা দেখা দেয়, যে কারনে নেতৃত্বের কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। সীতাকুণ্ডের উন্নয়নের ব্যর্থতার জন্য নেতৃত্বের ব্যর্থতা অনেকটা দায়ী।

সীতাকুণ্ডের স্বাধীনতা- উত্তর এবং স্বাধীনতা- পরবর্তী শিল্পের ধরণ এক নয়। স্বাধীনতা -উত্তরকালের সীতাকুন্ডের ভারী শ্রমঘন শিল্প স্বাধীনতা- পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে গড়ে উঠে অনেকটা অপরিকল্পিত হালকা ধরনের শিল্পকারখানা, যেখানে খুব বেশি পরিমান শ্রমিকের কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। আগে প্রতিটি কারখানায় কত শতাংশ স্থানীয় শ্রমিক নিতে হবে সেই ব্যাপারে একধরনের নীতিমালা ছিলো কিন্তু বর্তমানে এই ধরনের কোন সমঝোতা না থাকায় সীতাকুণ্ডের শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে কম। জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় নগদ অর্থের লোভে কৃষিজমি বিক্রির ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষিজমি আবাসভূমিতে পরিনত হচ্ছে, ফলে কাজ হারাচ্ছে কৃষক এবং কৃষিশ্রমিকরা। শিপব্রেকিং শিল্পের সমস্যা, বর্তমান প্রজন্মের যুবসমাজের কায়িকশ্রমে অনিহা সীতাকুণ্ডের বেকার সমস্যা বৃদ্ধি করছে।

.

উন্নয়নের ইতিবাচক ধারায় যদি সীতাকুন্ডকে ফিরিয়ে আনতে হয় তবে প্রথমেই সীতাকুণ্ডের বর্তমান অবস্থাকে বিশ্লেষন করেত হবে। উন্নয়নের দুটো ধারাকেই অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন সমান গুরুত্ব দিতে হবে কারন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া যেমন সমাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয় তেমনি ভাবে সামাজিক উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্থহীন। সামাজিক অবক্ষয় রোধে এবং সামাজিক সম্প্রতি রক্ষায় জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এলাকার সচেতন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, মিডিয়া এবং নেতৃত্বকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে। অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথমেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাহিদাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এই জন্যে প্রয়োজন স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, স্থানীয় চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ, অর্থনিতিবিদ,শিল্পকারখানার মালিক, গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সর্বোপরি প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্ঠা। সবার অংশগ্রহন এবং দিকনির্দেশনা ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে একটি উন্নয়নের রোড ম্যাপ এবং একে ভিত্তি ধরে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে।

আমি সকল সীতাকুণ্ডবাসীর সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত জীবন কামনা করি এবং দূরদর্শিতাপূর্ণ, শিক্ষিত, নিঃস্বার্থ নেতৃত্বে সীতাকুণ্ড হউক আগামিদিনের উন্নয়নের মডেল।

লেখকঃ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
পরিচালক
মোহাম্মদী গ্রুপ, ঢাকা।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print