
প্রতি বর্ষায় পাহাড় ধসে প্রাণহাণির পরও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের পাহাড় থেকে সরার আগ্রহ নেই। কারন একটাই কম টাকায় এসব ঘর ভাড়ায় মিলে। বেতনের টাকায় ঘর ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই পাওয়াকেই নিরাপদ মনে করেন তারা। পাহাড় ধসে প্রতিবছর চোখের সামনে মৃত্যু দেখলেও সেই দুংসহ স্মৃতি বেঁচে থাকার আকুতির কাছে সহনীয় হয়ে যায়। আর এ কারনেই চলতি বছরের ১১ এপ্রিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পরিচালিত প্রথম দিনের উচ্ছেদ অভিযান অনেকটাই ব্যর্থ হয়। অভিযান শেষ না করেই ফিরে যেতে হয় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।
১১ এপ্রিল ঘটনার সূত্রে আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ঘর উচ্ছেদের পর অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হন। কারণ বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করলে বিক্ষোভে নারীদের সামনে দেখা যায়। উচ্ছেদে দায়িত্বরত পুলিশের নারী কনস্টেবলদের সঙ্গে তারা বাকবিতন্ডা করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম সদর সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মনসুর তখন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মতিঝর্ণার পাহাড় ও পাহাড়ের খাদে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা নির্দেশনার পরেও সরে না যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি তখন আরো জানান, প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী পাহাড়ের খাদে অবৈধভাবে বসবাসরতদের সরাতে এই উচ্ছেদ অভিযান। অভিযানে পাহাড়ের খাদে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত ১০/১২টি বাড়ির স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৫টি বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
আবদুল্লাহ আল মনসুর তখন আরও জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকালে অভিযান শুরু হলে স্থানীয় লোকজন উচ্ছেদে বাধা দিতে চেষ্টা করে। অথচ আমরা এসেছি তাদের বাঁচাতে, পাহাড় ধসে তাদের প্রাণহানি ঠেকাতে এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য।

তিনি তখন জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে ১১টি পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে লালখান বাজারে মতিঝর্ণা ও ওয়াসার টাংকির পাহাড়। সেখানে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত সিঁড়ির ন্যায় পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ টাংকির পাহাড়ে রয়েছে দ্বিতল ভবনও। দুই থেকে আড়াই ফুট সরু সুরঙ্গের মতো চলাচলের পথ রেখেই এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ পাহাড়ে গড়ে উঠেছে তিন হাজারেরও বেশি পরিবারের আবাসস্থল। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সব ধরনের উপযোগিতা বিদ্যমান থাকায় এ পাহাড় ছেড়ে কেউ অন্যত্র যেতে চায় না।
প্রসঙ্গত, আসন্ন বর্ষাকাল ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম মহানগরসহ সব উপজলায় পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদশে অবৈধ বসবাসকারীদের চলতি বছরের ১৫ এপ্রিলের মধ্যে উচ্ছেদ করতে ছয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
বর্তমানেও একই অবস্থা বিদ্যমান। অপরিবর্তনীয় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের মনোভাব। নগরীর লালখান বাজার, মতিঝর্না, হামজারবাগ নবীনগর পাহাড়, বার্মা কলোনি পাহাড়, এনায়েত বাজার জামতলা বস্তি, পলোগ্রাউন্ড পাহাড়, বাটালী হিল, জিলাপী পাহাড়, নাসিরাবাদ পাহাড়, এ কে খান পাহাড়, চন্দ্রনগর পাহাড়, রউফাবাদ পাহাড়, কুসুমবাগ, জালালাবাদ, সেনানিবাস, বায়েজিদ বোস্তামী, বন গবেষনাগারের পেছনে, খুলশী, ষোলশহর, ফৌজদারহাট, কুমিরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চট্টগ্রামের অধিকাংশ পাহাড়ে বৈধ কিংবা অবৈধভাবে শতাধিক বস্তি গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় প্রায় ৫ লাখ লোক বাস করে বলে বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জানা গেছে।
সরেজমিন এসব এলাকার কয়েকটি ঘুরে দেখা গেছে, পুরোদমে পাহাড়ের পাদদেশে নতুনভাবে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু হয়েছে। টাইগারপাস এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পিছনের পাহাড়ের নীচে আবারো প্রায় অর্ধশত পরিবার ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বাঁশের মাচার ছাউনির উপরে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ঘরের সাথে তৈরী করা হয়েছে অস্থায়ী লাইট্রিন, গোসলখানা। বসকারীররা খাবারের পানি সংগ্রহ করছেন পার্শ্ববর্তী রেলওয়ে কলোনী থেকে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতি যাই হোক, গত বছরের ৪ জুলাই চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধ্বসের কারন সবার জানা থাকলেও সেই কারন চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসেছিলো আলোচনা সভা। ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তখন রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে যান বান্দরবানে। কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা। তিনিই সভার সভাপতিত্ব করেন।
পাহাড়ধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সেই সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. অর্ধেন্দু শেখর রায়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দা সারোয়ার জাহান, জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল হক প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা বলেন, ভূমিধসের কারণ চিহ্নিত করে এ সংক্রান্ত করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ তৈরি করে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেব। আগে কি হয়েছে, কি হয়নি তা নিয়ে আমি ভাববো না। আমরা ভিকটিমসহ সবার সঙ্গে কথা বলবো। আমি সবাইকে নিয়ে এর মূল কারণ খুঁজে বের করবোই।
কিন্তু অনেক আগেই পাহাড় ধসের কারন চিহ্নিত করেছেন পরিবেশবিদ ও প্রকৌশলীরা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারীর সাথে মুঠোফোনে পাহাড় ধসের কারন ও করণীয় জানতে মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাহাড়ের মাটি কেটে নেয়ার কারণে মাটির সঙ্গে পাহাড়ের ঢালের আনুভূমিক আদর্শ কোণে পরিবর্তন ঘটেছে। আর এ কারণেই রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি, ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়ের নিচে মনুষ্যবসতি গড়ে ওঠায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
বিশদ ব্যাখ্যা করে বুয়েটের এ অধ্যাপক আরো বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মকে লঙ্ঘন করলে পাহাড়ধস ঘটতেই থাকবে, দুর্ঘটনা হতেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বলা হয়, মাটির সঙ্গে আনুভূমিকভাবে পাহাড়ের আদর্শ কোণ হওয়া উচিত ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি কিংবা অন্তত: ৩০ ডিগ্রি। প্রাকৃতিকভাবে, এসব পাহাড়ও সাধারণত এভাবেই গড়ে ওঠে। কিন্তু যদি প্রকৃতির এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে এই কোণ ৬০ ডিগ্রি বা ৭০ ডিগ্রিতে পরিণত করা হয়, তাহলে এ ধরনের ধস বা মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়ানোর কোনো উপায় থাকে না। পাহাড়ের মাটি কাটা এবং এর নিচে মানুষের বসতি গড়ে ওঠায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে এসব দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি ঘটাচ্ছে বলে জানান ড. আনসারী।
পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে ড. মেহেদি আরো জানান, প্রায় ১০ বছর আগে আমরা একটা জরিপ করে দেখেছি, মাটি কাটার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ পার্বত্য অঞ্চলের অনেক পাহাড়ের ঢাল আনুভূমিক ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি হয়ে গেছে। কোনো কোনো পাহাড়ের ক্ষেত্রে এটি ৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে দেখেছি আমরা। তিনি জানান, যখন বৃষ্টি হয় তখন এসব পাহাড়ের মাটির মধ্যে পানি ঢুকে যায় এবং পানির ভারে সেগুলো ভেঙে নিচে পড়ে।
পাহাড় ধসের মতো দুর্ঘটনা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. আনসারী জানান, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে গেলে সবার আগে পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিশ্চিত করতে হবে যেন পাহাড়ের নিচে ৫০০ মিটার বা অন্তত ৩০০ মিটারের মধ্যে কোনো বসতি বা স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে। আইন করে এগুলো বন্ধ করতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবে না। উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের পাহাড় ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো সবসময়ই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো প্রায় মৃত্যুফাঁদ। এ ক্ষেত্রে যারা উদ্ধার কাজ চালাবে তাদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
তার কথার সূত্র ধরে আরো জানা যায়, পাহাড়গুলো সবুজ দেখায় প্রচুর বৃষ্টির কারণে লতা গুল্ম আর ছোট প্রজাতির গাছ জন্মায় বলে। কিন্তু এসবের শেকড় মাটির খুব গভীরে যায় না। বড় গাছের শেকড় যেমন গভীরে গিয়ে মাটিকে আকড়ে থাকে। বড় গাছ কেটে ফেলার কারনে মাটির শক্তি কমে যাচ্ছে। ভূমি ধসের এটাও বড় কারণ।
জিও সায়েন্স অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পাহাড় ধসের পেছনে প্রাকৃতিক কারণ এবং মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। প্রাকৃতিক কারণ হলো— পাহাড়ের ঢাল যদি এমন হয় যে ঢালের কোনো অংশে বেশি গর্ত থাকে। তখন অতিবৃষ্টিতে ভূমি ধস হতে পারে। এ ছাড়া ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং পাহাড়ের পাদদেশের নদী ও সাগরের ঢেউ থেকেও পাহাড় ধস হতে পারে। আর মনুষ্য সৃষ্ট কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, পাহাড়ের গাছ পালা কেটে ফেলা, মাটি কেটে ফেলা, পাহাড়ে প্রাকৃতিক খাল বা ঝর্ণার গতি পরিবর্তন, পাহাড়ের ঢালুতে অতিরিক্ত ভার দেওয়া এবং খনি খননের কারণে পাহাড় ধস হতে পারে। তবে আমাদের ভূতাত্ত্বিকরা বলছেন, বাংলাদেশে মূলত পাহাড়ের উপরের দিকে কঠিন শিলার অভাব, পাহাড়ের মাটি কেটে ফেলা এবং বড় গাছপালা কেটে ফেলার কারণেই পাহাড় ধস হয়ে থাকে।
পাহাড় ধসের কারন জানা সবার। তারপরও জানা বিষয়টি জানতে আবার সরকারী টাকা খরচ করে ১৫ সদস্যর কমিটি নিয়ে পাহাড়ে আবার যাওয়া কেন এ প্রশ্নের উত্তওে তৎকালিন জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী তখন জানিয়েছিলেন, সবকিছুরই একটা আপডেট থাকে। আমরা আপডেট তথ্য নেবার জন্যই আবার পাহাড় ধসের ঝুকিপূর্ণ এলাকায় যাচ্ছি।
তিনি তখন আরো জানান, এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কোনোমতেই জনবসতি করতে দেওয়া উচিত না। উচ্ছেদ করতে গেলে কারা বাধা দেয় তাদেরকেই আগে চিহ্নিত করতে হবে। তবেই এক্ষেত্রে সমাধান মিলবে।
প্রসঙ্গত একই কমিটি এই কমিটি ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড়ধসে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির দেওয়া ৩৬টি সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন জায়গা লিজ নিয়ে কিংবা জোরপূর্বক দখল করে পাহাড় কেটে এ বসতি গড়ে তোলা হয়। এলাকার প্রভাবশালীরা এসব জায়াগায় ছোট ছোট ঘর তুলে ভাড়া দেন। নিরিহ গরীব লোকজন কম খরচের কথা ভেবে এখানে ঝুঁকি নিয়ে বাস করেন। এদের বেশিরভাগই রিকশা, টেক্সি, ঠেলাগড়ি চালক, দিনমজুর, ফেরিওয়ালার মত নিš§আয়ের লোক।
তবে পাহাড় ধসে মৃত্যু কিংবা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসের সঠিক কোন পরিসংখ্যান সরকারি,বেসরকারি কিংবা স্বেচ্ছাসেবী কোন সংস্থার কাছে নেই। তবে গত ৬ বছরে চট্টগ্রাম ও আশে পাশের এলাকায় পাহাড় ধসে কমপক্ষে ২৫০ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতিঝর্না,বাঘঘোনা, ঢেবারপাড় (কুসুমবাগ), খুলশি, নাছিরাবাদসহ কিছু এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা প্রতি বর্ষাতেই ঘটে।
মতিঝর্না এলাকার পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে এখানে অন্তত ৩ হাজার পরিবার বসবাস করে। আর প্রতিবছরই ঘটে দুর্ঘটনা। তারপরও এখানে ঝুঁকি নিয়ে থাকার কারণ কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভূমিহীনদের আবার ভয় কি? আমি এখানে ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি। সমতল এলাকায় এ ভাড়ায় আমাকে কে ঘর ভাড়া দেবে?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের পাহাড়কাটা ও ঝুঁকিপূর্ণ আবাসন নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি নগরীর ৬টি ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে তিনি পাহাড়ের পাদদেশে ৬৫টি বস্তির সন্ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, ৪১টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগের মধ্যেই এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে এ ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ করার পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা লোকজনদের অন্যত্র পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার বলে তিনি জানান। পাহাড় কাটা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করাও জরুরী বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বলেন, ‘পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় ক্রমশ ঢালু হয়ে পড়ে এবং মাটি নড়বড়ে হয়ে যায়। যার কারণে তা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মাটি ধসে নিচের দিকে নেমে আসে। পাহাড়ের ঢালে বসতিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আস্তে আস্তে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা দরকার।’
নগরীতে অবাধে পাহাড়কাটা চললেও এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেতেদর দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তারপরও আমাদের অবগত করলে প্রশাসনের সাথে অভিযানে যাই। তবে কোথাও পাহাড় কাটা হলে তার নজরদারি ও পাহাড় কাটা বন্ধ করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণের দায় পরিবেশ অধিপ্তরের, জানান আজাদুর রহমান মল্লিক।