ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

চট্টগ্রাম চাহিদার অর্ধেকও গ্যাস মিলছে না

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

রাজীব সেন প্রিন্সঃ
চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সংকটে জ্বলছে না নগরীর বেশির ভাগ এলাকার অধিকাংশ চুলো। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা মিটিমিটি জ্বললেও বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এই হাল প্রায় নিভু নিভু। ফলে পবিত্র রমজান মাসে চরম এ সংকটে ইফতারের আগে নাজুক পরিস্থিতে পড়ছে রোজদার গৃহিনীরা।

গ্যাস সংকটে বেগ পেতে হয় ইফতার তৈরিতে। আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট বাড়িতেও বাধ্য হয়ে জ্বালাতে হয় লাকড়ি। অন্যদিকে অনিচ্ছা সত্বেও বাইরে থেকে ইফতারী কিনে রোজা ভাঙ্গতে হচ্ছে অনেক পরিবারের। আবাসিকের পাশাপাশি এই বিপুল ঘাটতির খেসারত দিতে হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্প খাতের গ্রাহকদেরও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা গ্যাস সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ সংকট আরো চরম আকার ধারণ করে। কেউ কেউ কাঠের ও তুষের তৈরি লাকড়ি এনে অতিরিক্ত চুলা বানিয়ে ইফতার সামগ্রী তৈরি করছে। আবার কেউ কেরোসিন তেলের স্টপ চুলা কিংবা ইলেক্ট্রিক ওভেনে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছে। এতে করে প্রতিমাসে গ্যাস বিল পরিশোধ করা ছাড়াও তাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে মাস শেষে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় নগরীর মোমিন রোড, জামালখান, রহমতগঞ্জ, আন্দরকিল্লা, পাথরঘাটা, মুরাদপুর, বিবির হাট, হামজারবাগ হিলভিউ আবাসিক এলাকা, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, মধ্যম হালিশহর, মির্জাপুল, চান্দগাঁও ফরিদার পাড়া, বটতল মাজার গেইট, ঘাটফরহাদবেগ, বৌবাজার, ডিসি রোড, চকবাজার, বড়মিয়া মসজিদ, কাপাসগোলা, কেবি আমান আলী রোডসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৩০ টি ওয়ার্ডে গ্যাস লাইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

.

এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ কমে গেছে। ফলে পাইপ লাইনে প্রেসার কমে যাওয়ায় এই সংকট বিরাজ করছে। এদিকে গত ২৫ মে থেকে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ শুরু করার কথা থাকলেও পাইপলাইনে ত্রুটি থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে তারা বলেন, এলএনজিবাহী জাহাজে ভাসমান প্লান্ট থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমেই নগরীতে গ্যাস সরবরাহ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু পাইপলাইন পরীক্ষায় ত্রুটি পাওয়ায় সরবরাহ পিছিয়ে যায়। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে সরবরাহ শুরু হলে গ্যাসের এ সংকট আর থাকবেনা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা প্রায় পৌণে চার লাখ। সেই সাথে প্রায় ৩ হাজার শিল্প কলকারখানার বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে চট্টগ্রামে। সব মিলিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা মত দৈনিক ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন শুধু চট্টগ্রামে। সে জায়গায় বর্তমানে চট্টগ্রামে সরবরাহ হচ্ছে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। যা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট গত এক যুগ ধরে বিরাজ করছে জানিয়ে জামালখান এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় শুনে আসছি আগামি মাসে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এনে দ্রুত এর সমাধান হবে। কিন্তু মাস যায় বছর যায় এভাবে কেটে গেছে যুগ। সমাধান কিছুই হচ্ছে না। অথচ মাস শেষে বিলটা কিন্তু মাফ নেই।

চট্টগ্রাম আসকার দিঘী এলাকার বাসিন্দা মুছা হাওলাদার বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাসায় রান্না করে ইফতার করা সম্ভব হচ্ছে না শুধুমাত্র গ্যাস সংকটের কারণে। অনিচ্ছা স্বর্ত্তেও প্রতিদিন হোটেল তেকে ইফতার এনে খেতে হয়।

মিয়াখান নগরের বাসিন্দা গৃহিনী ফরিদা বেগম বলেন, রমজান মাসে চরম এ গ্যাস সংকট মোকাবেলায় ফ্ল্যাট বাড়িতেই বাধ্য হয়ে মাটির চুলা তৈরি করে লাকড়ি জ্বালিয়ে ইফতারি তৈরি করতে হচ্ছে। তারা এ ভোগান্তি হতে পরিত্রাণ পেতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, রমজানের শুরু থেকে এ সংকট একটু প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে চট্টগ্রাম নগরীর গ্যাস পাম্পগুলো বিকেল ৩টা থেকে বন্ধ থাকতো কিন্তু রমজানের শুরু থেকে তা বন্ধ হচ্ছে বিকেল ৫টার পর। এই কয়েক ঘন্টার বাড়তি চাহিদার চাপটি পড়ছে আবাসিকের গ্রাহকের উপর। তবে সমস্যার কথা তুলে ধরে উত্তরণের জন্য পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

ক্যাবের স্মারকলিপি : এদিকে গ্যাস সংকট সমাধানে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাস সরবরাহ, এলপিজিকে আরো স্বল্পমূল্য, বিতরণ ব্যবস্থা সহজলভ্য ও জনবান্ধব করার উদ্যো গ্রহনসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে রবিবার ২৭ মে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন ক্যাব চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দ।

পবিত্র রমজান মাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় ঘরে চুলা জ্বলে না অনেক এলাকায়। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারনে শুধুমাত্র শিল্প কলকারখানা নয়, পবিত্র রমজানে বাসাবাড়ী ও জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকট অতি জনগুরুত্বপুর্ন বিবেচনায় সমস্যাটি শুধুমাত্র গৃহিণীদের নয়, বস্তুত সামগ্রিক জাতীয় অর্থনীতিই পড়েছে সংকটের মুখে। জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম যে কোনো বিবেচনায় গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাই বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমান বৃদ্দির পাশাপাশি গ্যাসের চাপও (প্রেসার) বাড়ানো, উৎপাদন, সংযোগ, সুষম বন্টন ও বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দ।

স্মারকলিপিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দরা বলেন কেজিডিসিএল বেশ কয়েকবার চট্টগ্রামে বিরাজমান গ্যাস সংকট নিরসন হবার আশ্বাস দিলেও এর সুরাহা হয়নি। চট্টগ্রামের খুলসী, কোতোয়ালী, বন্দর, পতেঙ্গা, হালিশহর, পাঁচলাইশ, চকবাজার, লালখান বাজার, ফিরিঙ্গি বাজার, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, শুলকবহর, মেহেদীবাগ, চন্দনপুরা, আন্দরকিল্লা, বেপারী পাড়া, উত্তর আগ্রাবাদ এলকায় গ্যাস সংকট প্রকট। বিশেষ করে বাসা-বাড়ী ও শিল্প কলকারখানায় রান্নাবান্না ও শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তারা জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে জাতীয় সঞ্চালন লাইন থেকে গড়ে গ্যাস পাওয়া যায় ২৩০-৪০ ঘনফুট। ফলে গ্যাস রেশনিং করতে হচ্ছে। গ্যাসের সংকটের কারণে বেড়ে গেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দামও। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে বেশকিছু এলাকায় পরিবেশ বিনাশী লাকড়িই এখন রান্নাবান্নার প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে। শিল্প-কারখানায়ও গ্যাসের চাহিদার এক-চতুর্থাংশও পাওয়া যাচ্ছে না।
কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমদ মজুমদার স্মারকলিপি গ্রহন করে নগরীর গ্যাস সংকটাপন্ন এলাকাগুলিতে দ্রুত মেইনটিন্যান্স টিম পাঠিয়ে সঞ্চালন লাইনে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, অবৈধ সংযোগ ও অপচয় রোধে ভিজিল্যান্স টিম পাঠানোর প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান,ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সেলিম জাহাঙ্গীর এবং কেজিডিসিএল এর মহাব্যবস্থাপক (বিপনন) প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

*চট্টগ্রামে অপচয় রোধে আসছে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print