
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি বাস দুমড়ে মুছড়ে গেছে। এতে বাসটির ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। রবিবার (৩১ জুলাই) ভোর সাড়ে ৪ টার সময় উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরবাজারের রেলগেইট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আহত কয়েকজন হলো খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াপুর এলাকার দামিনি ত্রিপুরা (৪২), তার মা বিরলা ত্রিপুরা (৫৫), তার স্ত্রী পুষ্পিতা ত্রিপুরা (৩২), তার মেয়ে ইমং ত্রিপুরা (১৫ মাস), মকসুদুর রহমান (৩০), মাসুদ হোসেন (২৫), তার পিতা আনোয়ার হোসেন (৫০)।
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মস্তাননগর হাসপাতাল, বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল, কমফোর্ট হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। এদের মধ্যে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বিরলা ত্রিপুরাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রীবাহী বাসটি উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।
প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন গেইটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আহত যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান। ঘটনারপর থেকে গেইটম্যান পলাতক রয়েছে।

আহত বাসের যাত্রী দামিনি ত্রিপুরা জানান, রবিবার সকালে ময়মনসিংহ থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা রিফাত পরিবহণ নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে তার পরিবার নিয়ে উঠেন। বাসে কমপক্ষে ৩০ জন যাত্রী ছিল। বাসটি মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট রেলগেইট পার হওয়ার সময় চট্টগ্রামমুখী বিজয় এক্সপ্রেস নামের একটি দ্রুত গতির ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে ওই বাসের পেছনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়।
বাসটি সড়কের পূর্ব পাশে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন যাত্রী আহত হয়। তিনি আরো জানান, ট্রেন আসার সময় হলেও গেইটম্যান গেইট না ফেলে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে দুর্ঘটনার আওয়াজ শুনে তিনি ঘুম থেকে উঠে পালিয়ে যায়।

মিরসরাইয়ের চিনকি আস্তানা রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার রাজ কুমার রায় জানান, দুর্ঘটনার বিষয়টি রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ঘটনারপর থেকে গেইটম্যান ছাবের হোসেন পলাতক রয়েছে। গেইটম্যানের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিবেচনা করবেন। কোন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে কিনা তিনি জানেন না।
জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার উল্ল্যাহ জানান, দুর্ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যে কর্তৃব্যরত পুলিশ কর্মকতার্রা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে গেইটম্যানের অবহেলার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এতে কেউ নিহত হয়নি।
উল্লেখ্য-গত ২৪ জুলাই বিকালে একই স্থানে গেইটম্যান গেইট না ফেলার কারণে একটি মিনি পিকআপ ও একটি সিএনজি অটোরিক্সা রেললাইনের উপর উঠে যায়। পরে চট্টগ্রামমুখী আন্তঃনগর ট্রেন সোনার বাংলার চালক বিচক্ষণার সাথে গেইট থেকে ৫ শত গজ দূরে বারইয়ারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ট্রেনটি থামান। ফলে সেদিন বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় যাত্রীরা। এছাড়া গেইটম্যান ছাবের হোসেনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন না করে জুয়া খেলা ও রেললাইনের পাশে চাঁদার বিনিময়ে দোকান বসানোর অভিযোগ করেন বারইয়ারহাট পৌরবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী।