
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদার হাট শিল্প এলাকায় (সিটি গেইটের কাছে) অবস্থিত বহুজাতিক (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক) ঔষধ কারখানা গ্ল্যাক্সো স্মিথ হঠাৎ বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বৃহৎ এ ঔষধ কারখানাটি কোন কারণ ছাড়াই বন্ধ ঘোষনা করে। এতে করে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শ্রমিকদের সাথে পূর্বে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই এটি বন্ধ ঘোষনা করা হয় বলে জানান শ্রমিকরা।
এদিকে হঠাৎ করে অর্ধশত বছরের পুরনো এ বৃহৎ ঔষধ কারখানা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে অন্তত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কারখানার ভিতরে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছিল।
গ্ল্যাক্সো স্মিথ শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম জানান, গ্ল্যাক্সো স্মিথের সাবেক এমডি পাকিস্তানি নাগরিক এনাম আহমদের পরিকল্পনা ও ষঢ়যন্ত্রেই মূলত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ ছাড়াই এ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। সাইফুল জানান প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই গ্ল্যাক্সো লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলে আসছে। কখনো এ প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখোমুখি পড়েনাই। শ্রমিকরা আন্তরিকতার সাথে দিন রাত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে।
তিনি জানান মূলত পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে গ্ল্যাক্সো। বর্তমানে গ্ল্যাক্সোর রিজিওনাল হেড রাজু কৃষ্ণ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান লোকমান সহ উর্ধতন কর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে শ্রমিকরা। গেইটের বাইরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাতে আকবর শাহ থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন জানান, আজ বিকালে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার পর সেখানে কর্মরত আড়াইশ স্থায়ী এবং একশ’র বেশী অস্থায়ী শ্রমিক কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, ২৬ তারিখ ঢাকায় অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিং এ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় মালিক পক্ষ। এটি দীর্ঘদিন ধরে লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক এখন লন্ডনে অবস্থান করছে।
উল্লেখ্য ১৯৬৩ সাথে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় (ফকির হাট) প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর রাজস্ব বাবদ শত শত কোটি টাকা জাতীয় রাজস্বখাতে জমা করে আসছে। এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যা থেকে সরকারও প্রচুর লাভ্যাংশ পেয়ে থাকে। কিন্তু কোন কারণ বা কৈফিয়ত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের জুন থেকে তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।
এমনকি ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল নেই তাদের ভান্ডারে। সেই সাথে অধিক নিরাপত্তার অজুহাতে সিসি ক্যামেরা বাড়িয়েছে, সাথে নিরাপত্তারক্ষীও বাড়ানো হয়েছে। এসবের জন্য তারা সদ্য বিদায়ী পাকিস্তানি পরিচালক (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় কর্মরত) ইরাম সাকিব ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়ী করে শ্রমিকরা বলেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে উনাদের হাত রয়েছে। এমনকি চলতি মাসে নিযুক্ত নকিবুর রহমানসহ বেশকিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন যাদেরকে দ্বিগুণেরও বেশি বেতন বাড়িয়েছেন জিএসকে কর্তৃপক্ষ। অথচ কারখানায় নিযুক্ত প্রায় ২০০ শ অধিক শ্রমিকের ভাগ্যে কী হবে- তা নিয়ে তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছে।