
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতি গ্রেনেড হামলায় দুই জঙ্গি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় ঢাকা থেকে আসা র্যাবের বোমা ডিসপোজাল টিম। র্যাবের অভিযানের পর ধরা পড়ে যাবার ভয়ে তারা নিজেরা নিজেদের হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে র্যাব। অভিযান শেষে ঘেরাও করে রাখা জঙ্গি সে আস্থানা থেকে জীবিত কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে সেখান থেকে বেশ কিছু তাজা গ্রেনেড, পিস্তল ও অত্যাধুনিক একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করেছে র্যাব।
গোপন সংবাদের সুত্র ধরে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহাড় সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছে একটি বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে এসব বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে ঢাকা থেকে আসা র্যাবের বোমা ডিসপোজাল টিম।
এর আগে রাত থেকে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি টিম বাড়ীটি ঘেরাও করে রাখে। এর পর মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় বাড়ীতে থাকা জঙ্গিদের আত্ম সমপর্ণ করতে। কিন্তু জঙ্গিরা তাতে সাড়া না দিয়ে প্রথমে বাড়ীর ভীতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে প্রথমে গুলি এবং পেরে কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় বলে জানায় র্যাব কর্মকর্তারা।

এরপর ঘেরাও করে রাখা র্যাব সদস্যরা নিরাপদ দুরত্বে সরে যায়। পরে বাড়ীটিতে আর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানান র্যাব।
র্যাবের ধারণা উদ্ধার হওয়া মরদেহ দুটি জঙ্গি দল জেএমবির সদস্য। তারা নিজেরা আত্মঘাতি গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছে।
উদ্ধার করা গ্রেনেড ও অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে-একটি একে ২২ রাইফেল, ৩টি পিস্তল,৫টি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড। এছাড়া ওই বাড়ি থেকে দুটি মরদেহ (পুরুষ) পাওয়া গেছে। যে গুলোর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে র্যাব জানায়।
শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী র্যাবের।
এ দিকে অভিযান শেষে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ব্রিফিংয়ে জানান,আদালত ভবনে হামলাই ছিল মীরসরাই সোনাপাহাড় এলাকায় অবস্থান করা জেএমবি সদস্যদের মুল টার্গেট। এখান থেকেই মূলত হামলাসহ সকল কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জেএমবি’র একটি গ্রুপ সোনাপাহাড় এলাকার চৌধুরী ম্যানশনের এ বাড়ীটিতে অবস্থান নেয়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিএসআরএম’র কর্মচারী পরিচয়ে সোহেল নামে এক লোক এ বাড়ীর ৩টি রুম ৫হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিল। অপর রুমে নাইম নামের বিএসআরএম’র আরো এক কর্মচারী ভাড়া থাকতো।
তাদের সাথে এক নারীসহ চার জন থাকার কথা ছিল। বাড়ী ভাড়া নেয়ার সময় সোহেল’র সাথে এক নারী ছিল যাকে তিনি স্ত্রী বলে পরিচয় দেন।
এ ঘটনায় বাড়ীর মালিক মজাহার চৌধুরী ও কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মুফতি মাহমুূদ জানান, সোনাপাহাড় চৌধুরী ম্যানশন থেকে উদ্ধার হওয়া একে ২২ রাইফেলটির সাথে ঢাকার হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের ব্যবহৃত রাইফেলের মিল রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিরা আবারো একত্রিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তারা ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়েছে। জরুরী যোগাযোগের সুবিদার্থে এ বাড়ীটি বেছে নেয় জঙ্গিরা। এখান থেকে সহজে এবং অনায়াসে যে কোন জায়গায় আসা যাওয়া করতে পারবে।
এ ছাড়া বাড়ীর পিছনে ঢাকা চট্টগ্রাম রেললাইন ও সামনে মহাসড়ক রয়েছে। এ দুটো জিম্মি করাও তাদের টার্গেট হতে পারত।
মাহমুূদ আরো বলেন, র্যাব জঙ্গি দমনে সব সময় তৎপর। জঙ্গিবাদের সাথে র্যাবের কোন আপোষ নাই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ বলেন, এ বাড়ীতে আরো যারা থাকার কথা ছিল তাদের ব্যাপারে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে অভিযান শেষে এলাকাটিকে নিরাপদ জোন ঘোষনা করে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড গুলো নিস্ক্রিয় করা হয়েছে।
এর আগে গতরাত তিনটায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চৌধুরী ম্যানশনের এ বাড়ীতে অভিযান চালায় র্যাব। এক পর্যায়ে র বের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা ঘরের ভিতর থেকে গুলি করতে থাকে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। রাত সাড়ে চারটার দিকে পর পর বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরন ঘটে। এর পর থেকে পুরো বাড়ীটি ঘিরে রাখে র্যাব এসময় পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
*মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় র্যাবের অভিযান, গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ
*“চট্টগ্রাম আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়ার টার্গেট ছিল জঙ্গিদের”