মুনির আহমদ
নিঃস্বার্থ ভালবাসার উদাহরণ দিতে গিয়ে আমরা অনেকেই কথায় কথায় বলে থাকি, “পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের ভালবাসাই নিঃস্বার্থ। মা-ই পারেন সর্বস্ব ত্যাগ করে সন্তানকে ভালবাসতে। নানা ঝড়ঝাপটা ও প্রতিকূলতায় একজন মায়ের পক্ষেই সম্ভব, নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে তার সন্তানকে বুকে আগলে রেখে পরম মমতায় শিক্ষা-দীক্ষা ও আদব-কায়দা দিয়ে গড়ে তোলা…..” ইত্যাদি। কিন্তু যে হারে বর্তমানে মায়েদের হাতে অবুঝ শিশু সন্তান খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে, নিঃস্বার্থ ভালবাসার এই উদাহরণটাই হুমকির মুখে পড়েছে।
গত এক সপ্তাহেই ৪ জন অবুঝ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে আপন মায়ের হাতেই। প্রায় প্রতি মাসেই এমন করুণ ও নৃশংস ঘটনার খবর পত্রিকায় দেখা যায়। পত্রপত্রিকায় মায়েদের হাতে যে হারে শিশু সন্তান খুনের ঘটনার অহরহ খবর দেখা যায়, বাবাদের হাতে এর ভগ্নাংশও দেখা যায় না। এসব খুনের ঘটনার অনুসন্ধানে দেখা যায়, হয় এসব ঘটনার পেছনের কারণ মায়েদের পরকীয়া বা অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ায় পথে কাঁটা দূর করার চিন্তা থেকে, অথবা গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে পড়ার ভয় থেকে, অনৈতিকতায় লিপ্ত পরপুরুষের হাত ধরে বের হয়ে পড়ার সময় মায়া থেকে সন্তানকেও সাথে নিয়ে সেই অনৈতিক পরপুরুষের গলার কাঁটা করার বলি হচ্ছে অবুঝ সন্তান। নতুবা দাম্পত্য কলহের জেরে মায়েদের অতিআত্মকেন্দ্রিক চিন্তায় ভুল সিদ্ধান্তের বলি হচ্ছে শিশু সন্তান।
যেমন- আমি তো মরে যাব, আমার প্রিয় এই সন্তানদেরকে কার কাছে রেখে যাব। ওদের বাবা তো আরেকটা বিয়ে করে মৌজ মারবে। সন্তানদেরকে তো দেখবে না। তারা খাবে কই, ঘুমাবে কই……। তবে কি মায়েদের কোল সন্তানদের জন্যে আর নিরাপদ থাকছে না???? মায়েদের হাতে এসব নৃশংস ঘটনার হার বৃদ্ধি হতে থাকায় বাবাদের এখন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। সর্বাবস্থায় দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে চলুন এবং সকল প্রকার অনৈতিকতা পরিহার করুন।
১। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দাম্পত্যকলহ লেগেই থাকলে, অথবা স্ত্রী অনৈতিকতায় লিপ্ত বলে সন্দেহ হলে, তাকে সৎপথে ফিরিয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টার পাশাপাশি সন্তানদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ, শিশু সন্তানদেরকে রেখে একজন মা যখন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, বুঝতে হবে তিনি আর সন্তানদের স্বার্থ বড় করে দেখছেন না। যে কোন ভাবেই সন্তানরা আর তার হাতে নিরাপদ নয়। যে কোন সময় তার অনৈতিকতা ফাঁস হওয়ার ভয় থেকে, অথবা অনৈতিকতায় পথের কাঁটা দূর করার জন্যে তার হাতে সন্তান বলি হওয়ার ভয় বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, যার সাথে অনৈতিকতায় লিপ্ত, তার সাথে ভেগে পড়ার সময় নিজেকে সন্তানের বাবার তুলনায় অনেক বেশী দায়িত্বশীল ভেবে সন্তানকেও সাথে নিয়ে পরপুরুষের সাথে নিয়ে যায়। আর সেই পরপুরুষটা শিশু সন্তানটাকে পথের কাঁটা মনে করে……..।
২। অন্যদিকে দাম্পত্য কলহের ক্ষেত্রে সন্তানদের প্রতি মায়েদের অতি আন্তরিকতাও সন্তানদের বিপদ ডেকে আনার ঘটনা ঘটছে। তখন মা কোন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিলে এমনটা ভেবে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে, “তার অবর্তমানে সন্তানদের ভবিষ্যত তো পুরাই অন্ধকার। সন্তানের বাবা আরেকটা বিয়ে করবে, সেই বৌ সন্তানদেরকে কষ্ট দিবে। সতীনের অবজ্ঞা-অবহেলায় সন্তানের বেঁচে থাকা দায় হবে। তাদেরকে কে খাওয়াবে, কে পরাবে, কে আদর করে ঘুম পাড়াবে…..। তার চেয়ে সন্তানদেরকেও হত্যা করে আমার সাথে নিয়ে যাই”। সুতরাং একজন দায়িত্বশীল পিতাকে সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে চোখকান খোলা রেখে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সন্তানের প্রতি মায়ের আচরণ ও দায়িত্ববোধ চুপচাপ অবলোকন করতে হবে। এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, নিজের বা স্ত্রীর; যে কারো অনৈতিকতায় বা সম্পর্কে কলহের জেরে সন্তানদের জীবনও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।
লেখকঃ হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব এবং নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক মুঈনুল ইসলাম।