ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

মন্ত্রীর নির্দেশে মামলা হলেও যুবলীগের দখলবাজদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় শতবর্ষী বৃদ্ধ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তী পৈত্রিক ভিটামাটি ছেড়ে সন্ত্রসীদের হুমকিরমুখে পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার দৃস্টি পড়েছে শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তী পৈত্রিক সম্পত্তির ওপর। ওই সন্ত্রাসী এখন তাঁর সহায় সম্পদ পৈত্রিক ভিটামাটি দখল ও পাশবর্তি মন্দির দখল করতে উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে শেষ বয়সে সন্মানটুকু নিয়ে বাঁচার সংগ্রাম করছে বয়োবিদ্ধ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তী।

কিন্তু সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের অত্যচার আর প্রাণ নাশের হুমকির কারণে নিজ এলাকায় যেতে পারছেন না তিনি ও তার পরিবার। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলেও সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলীয় নেতা হওয়ার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

.

জানাগেছে, একজন মন্ত্রীর নিদের্শে আনোয়ারা থানা পুলিশ মামলা নিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। আসামীদের গ্রেফতার কিংবা প্রবীণ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তীর কোন ধরণের নিরাপত্তাও তারা দিচ্ছে না।

ফলে প্রাণে বাঁচতে পরিবার নিয়ে নিজের বসতভিটে ছেড়েছেন প্রায় শত বছরের বৃদ্ধ পণ্ডিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী।

জানাগেছে আনোয়ারার জয়কালী হাট সরস্বতী মন্দির সড়ক সংলগ্ন এলাকায় ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাড়ি ও কালী মন্দিরটি তালা লাগিয়ে বসতভিটা ফেলে জীবন বাঁচাতে এলাকা ছেড়েছেন পণ্ডিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী ও তার পরিবার।

এলাকাবাসী জানায়, এর আগে সেখানে স্থানীয় যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম হেলাল (মধু হেলাল), আনোয়ার, মানিক, আবদুর রহিম ও মহিদুল্লাহ নামের পাঁচজনের নেতৃত্বে নিরঞ্জন চক্রবর্তী সম্পত্তি দখলে নিতে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়।

হুমকির মুখে পরিবারটি ভয়ে শহরে চলে গেছে। তবে কোথায় আছে তা কেউ জানেন না। প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজী হননি। প্রবীণ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তী আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় এবং তৈলারদ্বীপ বারখাইন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর ছেলে প্রণব চক্রবর্তীও তৈলারদ্বীপ বারখাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

প্রণব চক্রবর্তী জানান, যুবলীগ নেতা হেলাল তার দলবল নিয়ে গত ১০ এপ্রিল (বুধবার) সন্ধ্যায় বাড়িতে হানা দেয়। তারা ৭-৮ জনের একটি দল অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শয্যাশায়ী নিরঞ্জন পণ্ডিতের সামনে ছেলে-মেয়েকে জিম্মি করে। হেলাল ওই জমি ক্রয়সূত্রে নিজেদের দাবি করে জোরপূর্বক আগে থেকে তৈরী করা দলিলে বাবার টিপসই এবং সাক্ষী বানিয়ে তার স্বাক্ষর নেয়। এসময় সঙ্গে নিয়ে আসা হয় উপজেলা ভূমি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার অফিসের এক কর্মকর্তাকে। ৮ গণ্ডা জমি ছেড়ে না দিলে তাদের প্রাণে মারার হুমকিও দেয়া হয়।

.

শিক্ষক প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘এর আগে আমাকে তুলে নিয়ে গত ৬-৯ এপ্রিল পর্যন্ত হেলালের শহরের বাসায় আটকে রেখে ভয় দেখানো হয়। এসময় আমার মুঠোফোন ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং ডায়েরি পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে টাকা নেয়ার দাবি তুলে খালি চেকে স্বাক্ষর দেয়ার চাপও দেয়।

বলেছে, ‘বাংলাদেশ তোদের না, ভারতে চলে যা। ৪০ লাখ টাকায় জায়গাটি রেজিস্ট্রেশন করে নিলাম’। গত সপ্তাহে তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে ডবলমুরিং থানায় জিডিও করেছি। ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে এলাকাবাসী এবং আমি দেখা করে আবেদন জানিয়েছি। মন্ত্রীর নির্দেশের পরও হেলাল ও তার বাহিনী ধরা পড়েনি। তারা এলাকায় পাহারা বসিয়েছে’।

এদিকে এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে করেছেন ভুক্তভোগীর পুত্র শিক্ষক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী।

সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ২০১৬ সালে আমাদের বাড়ির অনতিদূরে একটি পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় মো. ফারুক নামের একজনকে আমমোক্তারনামা দেয়া হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা সেটি বহাল থাকার দাবি করলে আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তা বাতিলের আবেদন করি। এরপর ১০ এপ্রিল (বুধবার) আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে আমাদের ভিটেছাড়া করতে অস্ত্রের মহড়া দেয়। দলিলে বাবার টিপসই এবং সাক্ষী বানিয়ে আমার স্বাক্ষর নেয়। তারা আমার বোনের শ্লীলতাহানিও করেছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত আনোয়ারা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সালাউদ্দিন আহমদ ও দলিল লেখক মহিউদ্দিন জড়িত বলে শিক্ষক পরিবার অভিযোগ করেন।

প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন-‘দখলবাজদের কবল থেকে আমার পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধার করতে ভূমি মন্ত্রীর সহযোগিতা চাই। সারাজীবন শিক্ষকতা করে মানুষ গড়েছি। আজ তার প্রতিদান এভাবেই পেতে হচ্ছে। অপমানিত বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। জীবদ্দশায় তাঁর সম্পত্তি রক্ষা হয়েছে-সেটা যেন তিনি দেখে যেতে পারেন’ বলেন শিক্ষক প্রণব।

স্থানীয়রা জানান, ভূমিদস্যু মধু হেলালের দৃষ্টি পড়ায় আশপাশের ১০-১২টি সংখ্যালঘু পরিবারও এখন আতঙ্কে আছে। বন্ধ হয়ে গেছে কালী মন্দিরে পূজা-অর্চনা। ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) থেকে গ্রাম ছেড়েছে ওই পরিবার।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। ভূমিমন্ত্রীর এলাকায় ভূমিহারা বৃদ্ধ নিরঞ্জন পণ্ডিতকে তার জমি ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপদে বসবাসের জন্য সুযোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

আনোয়ারা ৭ নম্বর সদর ইউপি চেয়ারম্যান অসীম দেব বলেন, এলাকার একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির জমি দখলের চেষ্টার বিষয়টি নিন্দনীয়। প্রশাসন তাদের সঙ্গে আছে। মন্ত্রীর নির্দেশে থানায় মামলা হয়েছে।

আনোয়ারার স্থানীয় বাসিন্দা ও বলাকা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী সাংবাদিক জামাল উদ্দিন বলেন, নিরঞ্জন পণ্ডিত আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি আনোয়ারা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ও পরে তৈলারদ্বীপ-বারখাইন উচ্চবিদ্যালয়ে আজীবন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে আনোয়ারার ওই বাড়ি ছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঠিকানা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে দেশ হানাদার মুক্ত হবার পর থেকে সেটি হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আস্তানা। এই বাড়ি থেকে পুষ্পমাল্য বানিয়ে আমরা নিয়ে যেতাম শহীদ মিনারে। আমাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করতেন স্বয়ং পণ্ডিত স্যার।

‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির সংকটময় মুহুর্তে বাড়িটিতে বসেই আমরা ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা গোপনে প্রতিবাদ সভা করতাম। এই বাড়িতে বসেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গোপন কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিলাম। ভারত থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রেরিত লিফলেট গোপনে রাখা হয়েছিল নিরঞ্জন পণ্ডিতের বাড়িতে। সংকটময় পরিস্থিতিতে পণ্ডিত স্যার ও তার সন্তান প্রণব চক্রবর্তী আমাদেরকে বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ও আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহাসিক বাড়িটি আজ দখল হয়ে গেছে। মৃত্যু পথযাত্রী শিক্ষকের বাড়ি-ভিটে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে উদ্ধার করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি চাই’।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) প্রণব চক্রবর্তী এ ব্যাপারে মামলা করেছেন। সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- কামরুল ইসলাম হেলাল (মধু হেলাল), আনোয়ার, মানিক, আবদুর রহিম, মো. আলী প্রকাশ মহিদুল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন। আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তীর পরিবারে সদস্য ছেলে প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তীর তার বোন রত্না চক্রবর্তী, কন্যা কান্তা চক্রবর্তী ও পাপিয়া চক্রবর্তী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, ঐক্য পরিষদ মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, অধ্যাপিকা বিজয়া লক্ষী দেবী, জেলা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, ঐক্য পরিষদ দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. হরিপদ চক্রবর্তী, সাগর মিত্র, কল্লোল সেন, হরিপদ চৌধুরী বাবুল, তাপস দত্ত, রাজীব দাশ প্রমুখ।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print