বাংলাদেশের রোমান্টিক চলচ্চিত্রের ধ্রুবতারা, অমর নায়ক সালমান শাহ’র ৪৫তম জন্মদিন। দেশীয় চলচ্চিত্রের আকাশে ক্ষণজন্মা নক্ষত্র তিনি। বিপুল জনপ্রিয় এ নামটি অনেক সোনালী স্মৃতিতে মোড়ানো। অকালে চলে যাওয়া প্রিয় নায়ক তিনি। আজ অবধি সিনেমা প্রেমীদের অন্তরে দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারিত হয় সালমান শাহ’র নাম।
এই চিত্রনায়কের জন্মদিনকে ঘিরে উৎসবের আয়োজন করেছে তারই ভক্তদের সংগঠন সালমান শাহ স্মৃতি পরিষদ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) জসীম ফ্লোরে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কেক কাটা, সালমান শাহ স্মৃতি সম্মাননা প্রদান ও তারকামেলা এ উৎসবের মূল আকর্ষণ।
সালমানের পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোট ভাই শাহরান চৌধুরী ইভান। জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়া পাড়ায় নানার বাড়িতে।
ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দারুণ ফ্যাশনেবল আর স্টাইলিস্ট। ৮৫-৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ ম্যাগাজিনে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি মিউজিক ভিডিও ছিল। হানিফ সংকেতের স্বকণ্ঠে গাওয়া গান নিয়ে মিউজিক ভিডিওটি বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছিল। একজন সম্ভাবনাময় তরুণ তার পরিবারের নানা রকমের ঝামেলার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল তার থিম। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ’র মিডিয়ায় আগমন।
তখন অবশ্য ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তারও কয়েক বছর পর তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রে কাজ করেন এবং সে সময়ে তিনি বেশকিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন।
চলচ্চিত্রের নায়ক সালমানের আত্মপ্রকাশ ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ। সময়টা ছিল রোজার ঈদের। হিন্দিতে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির কপিরাইট কিনে আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে দিয়ে তৈরি করে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’।
নায়িকা আরেক নবাগতা আনন্দ বিচিত্রা সুন্দরী মৌসুমী। আর এ ছবির মাধ্যমেই ইমন হয়ে উঠলেন বাংলার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ। এই একটি ছবি দিয়েই তিনি দখল করে নিয়েছিলেন সব শ্রেণির দর্শকের হৃদয়। বাংলাদেশি ছবির প্রায় ৬০ বছরের ইতিহাসে সালমানই একমাত্র নায়ক যিনি সর্বমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন।
সালমান ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকে কখনো মৌসুমী, কখনো শাবনূর, কখনো আবার শাবনাজ, শাহনাজ, লিমাকে নিয়ে উপহার দিতে থাকলেন দর্শকপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল ছবি। তবে সালমান-শাবনূর জুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ায় তারা একসঙ্গে প্রচুর ছবিতে কাজ করতে থাকেন। সালমানের সর্বমোট মুক্তিপ্রাপ্ত ২৭টি ছবির ১৪টিতেই তার নায়িকা ছিলেন শাবনূর।
বেশকিছু ছবিতে নায়ক হিসেবে সাফল্য পাওয়ার কয়েক মাস পরই সালমান বিয়ে করেন জাতীয় দলের প্রাক্তন উইকেটকিপার-অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা এবং থাইল্যান্ডের নাগরিক চট্টগ্রামের বিউটিপার্লার ব্যবসায়ী লুসির কন্যা সামিরাকে। সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলো হচ্ছে- কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমশক্তি, কন্যাদান, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জুমান, মহামিলন, আশা ভালোবাসা, বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার, প্রিয়জন, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু, সত্যের মৃত্যু নেই এবং বুকের ভেতর আগুন।
মৃত্যুর আগে যেসব ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু কাজ করতে পারেননি- শেষ ঠিকানা, প্রেমের বাজি, আগুন শুধু আগুন, কে অপরাধী, মন মানে না, ঋণ শোধ, তুমি শুধু তুমি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার রহস্যঘেরা মৃত্যু হয়। তার পরিবারের দাবি ছিল এটা আত্মহত্যা নয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এফডিসিতে মৃত চলচ্চিত্রকর্মীদের একটি নামফলক রয়েছে। সেই তালিকায় নেই সালমানের নাম। অনেক অভিনেতার নামে ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে, এখানেও উপেক্ষিত সালমান।
সালমান শাহ’র জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে এমন ঘোষণা মাঝখানে হঠাৎ শোনা গেলেও বাস্তবে কিছু দেখা যায়নি। তারপরও এদেশে সর্বকালের সেরা স্টাইলিস্ট ও ফ্যাশনেবল আইকন হিরো সালমান বেঁচে থাকবেন তার ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সালমান শাহ’র জন্মদিনে রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।