
চট্টগ্রামের রাউজানের ১০ নং পূর্ব গুজরার আধাঁর মানিক গ্রামে প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্রের হুমকিতে বাড়ী ছাড়া হয়েছেন সত্যপ্রিয় বড়ুয়া। হামলা মামলা ও প্রাণ ভয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে এসে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রভাবশালী চক্রটি জাল দলিল তৈরী করে তার পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সত্যপ্রিয় বড়ুয়া।
এ চক্রের বিরুদ্ধে শুধু সত্য প্রিয় বড়ুয়া নয় গ্রামের অনেকেই ওই সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওই অপরাধচক্র গ্রামের নিরীহ-অসহায় মানুষের জায়গা-জমি জাল দলিল ও ভুয়া ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পেশিশক্তি প্রয়োগ করে বেদখল করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে অমানবিক খড়গ। এলাকার আরো নীরিহ মানুষের জায়গা জমি দখল করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন রকম সহযোগীতা পাচ্ছে না ভূক্তভোগীরা।
সত্যপ্রিয় বলেন, প্রভাবশালী অপরাধী চক্রের প্রাণনাশের হুমকিতে আমি এখন ঘরছাড়া। জীবনের নিরাপত্তায় নিজ গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে এসে যাযাবরের মতো খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি।’
আরো পড়ুন:- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাউজানে জায়গা দখলের অভিযোগ
তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য উজ্জ্বল বড়ুয়ার চক্রান্তে ও গুজরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক তহসিলদার মন্টু চাকমার যোগসাজসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. বিমল বড়ুয়া আমার পিতার নলিনী রঞ্জন বড়ুয়ার ওয়ারিশ সেজে নামজারী করে আমাদের জায়গা জবর দখল করে রেছে। অথচ আমার পিতা নলিনী বড়য়া তাদের মাকে বিয়ে করেন নি।
এ ব্যাপারে আমি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রাউজান ভূমি অফিসে বিবিধ মামলা নং ৮৭/২০১৬-১৭ করি। ওই মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়ার ওয়ারিশ অবৈধ ও তার নামজারি বাতিল করে আমার বাবার বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে আমাদের তিন ভাইয়ের নামে বিএস ৩৪৬০ নং খতিয়ান সৃষ্টি (পুনরায় নামজারি) করা হয়। কিন্তু তারপরও ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া তার সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের সদস্যদের দাপটে এখনও আমাদের বাব-দাদার ভিটেমাটিসহ জায়গা-জমি অবৈধভাবে নিজ দখলে রেখেছে।
সত্যপ্রিয় বলেন, এ নিয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে প্রতিকার চেয়েও সুবিচার পাইনি। কোথায় গেলে সুবিচার পাবো জানি না। আমি এই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে এখন নিজেই চরম বিপদের মধ্যে রয়েছি। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের ভয়ে আমি নিজ গ্রামেও যেতে পারছি না।
তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়। জানে মেরে ফেলারও চেষ্টা করা হয়। জীবন রক্ষায় কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এ চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- চৌকিদার পরিমল বড়ুয়া, সুজিত বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া (জাংগুলু), প্রণব বড়ুয়া (বলরাম), জয়ধন বড়ুয়া, নিদর্শন বড়ুয়া, সুভাস বড়ুয়া ও সুজাতা বড়ুয়া।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উজ্জ্বল বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, সত্যপ্রিয় বড়ুয়ার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে কিছু লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। এসব ঘটনায় তিনি অপদস্ত হন। সম্মানিত লোকজনের সম্মানহানি করা তার অভ্যাস। সম্মানিত লোকজনের নামে ফেসবুকে আজেবাজে লেখেন তিনি। সজল বড়ুয়ার সঙ্গে তার পরিবারের লোকজনেরই বৈরিতা রয়েছে।
এদিকে আঁধার মানিক গ্রামের এসব জোর জুলুম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেন ভূক্তভোগিরা। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের হোতা ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া ও উজ্জল বড়ুয়াসহ ওই অপরাধচক্রের সকল সদস্যকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান এবং সেইসঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসন যাতে রাউজানের আঁধারমানিক গ্রামের নিরীহ মানুষদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে সেই দাবিও জানায়।
অদ্যবধি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের পদক্ষেপ না নেয়ায় সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়ে চলেছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।