
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালমোহন স্ট্রিটে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, এফডিআর ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করেছে র্যাব।
সোমবার দিবাগত রাতে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
জব্দকৃত নগদ টাকার পরিমাণ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৫ কোটি টাকার এফডিআর, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, ১ কোজি স্বর্ণালঙ্কার বেশি হবে বলে জানায় র্যাব।
ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে এসব জব্দ করা হয়। এসময় পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়।

ক্যাসিনোর ৩২ সিন্দুকের মালিক’ দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও রুপন ভূঁইয়ার আরও পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। এ সময় এফডিআর এবং ক্যাসিনো সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালানোর বিষয়টি আজ মঙ্গলবার সকালে খুদেবার্তায় গণমাধ্যমকে জানায় র্যাব।
আটক দুই আওয়ামী লীগ নেতা।
পরে বেলা ১১টায় ১১৯/১, লালমোহন সাহা স্ট্রিটের সালাউদ্দিন হাসপাতালের কাছে অভিযানে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করা হয়।
অভিযানে দায়িত্ব পালনরত র্যাব কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ওই বাসা থেকে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি নগদ ১৫ কোটি টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৫ কোটি টাকার এফডিআর এবং ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ‘ক্যাসিনোর ৩২ সিন্দুকের মালিক’ দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও রুপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার এনু-রুপনের একটি, বন্ধু হারুন-উর-রশিদ এবং কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসা থেকে তিনটি সিন্দুক উদ্ধার হয়।
বানিয়ানগর মুরগিটোলা ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এনুর তিনটি সিন্দুক উদ্ধার করে র্যাব। ওই সিন্দুক থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৫ কোটি টাকার এফডিআর, ৭৩০ ভরি সোনা ও ৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ভূঁইয়া এনুর ৩২টি সিন্দুক রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, সম্প্রতি বংশালের ইংলিশ রোডের ‘শাবনাজ স্টিল কোং’ থেকে বিশেষ ফরমায়েশ দিয়ে এগুলো বানানো হয়।
সর্বশেষ অভিযানে বাকি সিন্দুকগুলোর মধ্যে আরও পাঁচটি উদ্ধার হলো।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এনুদের পরিবারের ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা হয়েছেন। আর এসব পদ বাগিয়ে নিতে তাদের খরচ হয়েছে ৫ কোটি টাকার মতো। এছাড়া থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের একটি অংশকে এনু-রশীদ ও রুপন দৈনিক, মাসিক ও এককালীন হিসেবে ‘বেতন’ দেন।
ক্যাসিনোর পাশাপাশি রাজধানীতেই তাদের পাঁচটি জুয়ার আসর চালানোর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বাড়ি ও স্থাবর সম্পদ নিয়েও মিলেছে বিস্ময়কর তথ্য।
র্যাব বলছে, এনু-রশীদ ও রুপনের ১৫টি বাড়ির তথ্য রয়েছে। তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, তাদের বাড়ির সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০টি। এছাড়া কেরানীগঞ্জে ১০০ বিঘা ও ভারতের শিলিগুড়িতেও তাদের বিপুল পরিমাণ জমিজমা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার ভাষ্য, মাত্র পাঁচ-সাত বছর আগেও সিরাজ ভূঁইয়া ছয় ছেলে নিয়ে নারিন্দায় টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তারা জুয়ার বোর্ড, ক্যাসিনো, চোরাচালান, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।
এনু ভ্রাতৃত্রয় রাজধানীতে পাঁচটি ক্যাসিনো চালাতেন। এর মধ্যে ফকিরাপুলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, নারিন্দায় জুনিয়র লায়ন্স ক্লাব ও পুরানা পল্টনের প্রীতম জামান টাওয়ারে নেপালিদের নিয়ে একটি ক্যাসিনো চালাতেন। এছাড়া ৪৫/১, দয়াগঞ্জে একটি ও নিজেদের বাসায়ও একটি জুয়ার বোর্ড চালাতেন তিন ভাই।