
দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল বন্ধ করে দেয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটি সেবা নেয়া প্রায় সাত লাখ গ্রাহক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তাদের কার্যালয় সিলগালা করে দেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রায় ৫শ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করায় বেশ কিছুদিন যাবত শুনা যাচ্ছিল সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাবার কথা। ফলে সিটিসেলের অনেক গ্রাহক অন্য মোবাইল ফোন অপারেটরের সেবা নিতে শুরু করেছেন। শুধু গ্রাহকরাই নন, সিটিসেলের মালিক থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তারাও এখন অন্য অপারেটরের সীম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সিটিসেল বা প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড অন্যতম কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোর্শেদ খান এখন নিজের ফোন নাম্বারটি বদলে বেসরকারী অপারেটর বাংলালিংকের সীম ব্যবহার করছেন।
তিনি তার বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের নাম্বারে সাথে মিলিয়ে বাংলালিংকের নাম্বার নিয়েছেন। যার নাম্বার ০১৯৬৬ ৮৮৮…।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এই বাংলালিংক নাম্বারে ফোন করলে এম মোরশেদ খান কল রিসিভ করেন। কুশল বিনিময়ের পর বাংলালিংক সীম ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরণের মন্তব্য করতে অস্বিকৃতি জানান। তবে সিটিসেল বন্ধ করে দেয়াকে হঠকারী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে জনাব খান বলেন, প্রতিষ্ঠানকে কোন ধরণের আগাম নোটিশ না দিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) হঠাৎ করে সিটিসেল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুইদিন সরকারী বন্ধ তাই আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছিনা। বন্ধের পর সিদ্ধান্ত নেবো কি করবো।
সিটিসেলে আপনার শেয়ার কত ভাগ জানতে চাইলে তিনি জবাব না দিয়ে বলেন “আপনি সিটিসেল অফিসে ফোন করেন সব তথ্য পেয়ে যাবেন”
মোর্শেদ খানের একটি ঘনিষ্ট্য সুত্র জানান, সরকার সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার পর প্রায় একমাস আগেই মোর্শেদ খান তার ব্যবহৃত সিটিসেল নাম্বারে সাথে মিলিয়ে একই ডিজিটের বাংলালিংকের একটি পোষ্টপেইড সীম নিজের নামে রেজিস্টেশন করে নেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে সিটিসেল নেটওর্য়াক বন্ধ করে দেয়ার পরপরই তিনি বাংলালিংকের সীম ব্যবহার শুরু করেন।
উল্লেখ্য-১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম মুঠোফোন অপারেটর হিসেবে টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার লাইসেন্স পায় সিটিসেল। ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করা সিটিসেলে বর্তমানে ৫৫ ভাগ শেয়ারের মালিক দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্যাসিফিক মোটরস ও ফার ইস্ট টেলিকম। এর মধ্যে প্যাসিফিক মোটরসের শেয়ারের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর ফার ইস্ট টেলিকমের ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিংটেল। প্যাসিফিকের কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোর্শেদ খান।
বর্তমানে সিটিসেলে ৪০০-এর বেশি কর্মী কর্মরত আছেন। এসব কর্মীর বেশির ভাগই নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না।
বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিটিসেলের গ্রাহকসংখ্যা বর্তমানে ৭ লাখ ২ হাজার। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির বাজার দখল ১ শতাংশের কম। ২০০৬ সাল থেকে গত ১০ বছরে ধারাবাহিকভাবে গ্রাহক হারিয়েছে অপারেটরটি। দেশের একমাত্র সিডিএমএ (কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেস) অপারেটর হিসেবে সিটিসেলের টাওয়ারের সংখ্যা ৮৫০-এর বেশি বলা হলেও বর্তমানে চালু থাকা টাওয়ারের সংখ্যা ২০০-এর কম বলে জানা গেছে।
জানাগেছে, সিডিএমএ সিস্টেমের কারণে প্রথম এ মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল সেটে অন্যকোন অপারেটরের সীম ব্যবহার করা যেতো না।
এনিয়ে গ্রাহতদের মধ্যে শুরু থেকে ক্ষোভ ছিল। দুভার্গের বিষয় সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে এখন অন্য অপারেটরের ফোন ব্যবহার করতে হচ্ছে।