খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি:

সরকারের দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে ১০টাকা কেজিতে চাল বিতরণের উদ্যোগ নানা অনিয়ন, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতর কারনে ভেস্তে যেতে বসেছে। হতদরিদ্র পরিবারের বদলে কার্ড ইস্যু হয়েছে জনপ্রতিনিধির পিতা, চাকুরিজীবি ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে। দলীয়করণ,আত্মীয়করণ ও কোথাও কোথাও নানা অজুহাতে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গূল দেখিয়ে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এখনো পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নজির দেখা যায়নি।ফলে সরকারের একটি জনবান্ধব কর্মসুচীর শুরুতেই প্রশ্নবোধক হয়ে দাড়িয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাটিরাঙা পৌরসভায় ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: সোহলে রানার দেয়া তালিকায় তার বাবার নামে হতদরিদ্র কার্ড ইস্যু করেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নের অনুকুলে ৯৭নং কার্ডটি মো: আবদুল খালেকের নামে ইস্যু করা হয়।
পৌর কাউন্সিলরের বাবার নামে হতদরিদ্র পরিবারের কার্ড ইস্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে চতুর পৌর কাউন্সিলর মো: সোহেল রানা এক আবেদনের মাধ্যমে তার বাবার পরিবর্তে আমেনা বেগম স্বামী মো: ইব্রাহিম এ নামে পরিবর্তন করার আবেদন করেন। একই উপজেলার গোমতি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে তালিকা প্রনয়নে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজ পরিবারের সদস্য, সরকারী চাকুরিজীবি ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের নামে ইস্যু অভিযোগ রয়েছে।

মাটিরাঙা উপজেলার গোমতি ইউনিয়নে ৮৭ নং কার্ডধারী মো: শহিদুল্লাহ ও ৩৩৫ নং কার্ডধারী শফিক মিয়া স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়রে সহকারী শিক্ষক। ১৩ নং কার্ডধারী সভাশীষ ত্রিপুরা সাবেক সেনাবাহিনীর সদস্য। ২নং কার্ডধারী মো: ইদ্রিস মিয়া ও ২৫ নং কার্ডধারী মো: দেলোয়ার হোসেন একই পরিবারের সদস্য। ৩ নং কার্ডধারী জাহিদুল ইসলাম,৯ নং কার্ডধারী ২৪ নং কার্ডধারী মো: সেলিম,৩৫ নং কার্ডধারী মো: জয়নাল আবেদীন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
৯২ নং কার্ডধারী মো: বজলুর রহমান ও ১২৪ নং কার্ডধারী পারভিন আক্তার একই পরিবারের মা ও ছেলে। ৯৬ নং কার্ডধারী খাতেজা বিবি ও ১১৪ নং কার্ডধারী আয়ুব আলী স্বামী ও স্ত্রী।
গোমতি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: দুলাল মিয়া অভিযোগে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুল শিক্ষক ও বিত্তশালী ব্যক্তির কার্ড প্রথম দফা বিতরণের সময় আটক করা হলেও পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে চাউল দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুল শিক্ষক শফিক মিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

গোমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: ফারুক হোসেন লিটন বলেন, অভিযোগের সত্য-মিথ্যা দুটোই আছে। মেম্বার দেওয়া তালিকায় ৮/১০টি নাম অনিয়ম হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর ঐসব কার্ড আটক করা হয়েছে এবং ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে কার্ডের নাম পরিবর্তন করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি পাল্টা অভিযোগ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে গোমতি ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল হোসেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিলার মমিন মিয়া অস্বীকার করে বলেন, কিছু লোক ডিলারশীপ না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
মাটিরাঙা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: বদিউল আলম বলেন, ১০ টাকায় চাউল বিতরণে নজিরবীহিন অনিয়ম ও দূনীতির মাধ্যমে প্রকৃত হত-দরিদ্রদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তালিকা প্রণয়নের কথা থাকলেও সব ইউনিয়নেই হয়েছে সরকার দলীয় নেতাদের সুপারিশের তালিকা হয়েছে। অপর দিকে মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: শামসুল হক বলেন, তালিকা প্রণয়নে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। নজরে আসার পর নিজেরা ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। মাটিরাঙা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপম চাকমা জানান, খাদ্য অফিসে একটি অভিযোগ বাক্স খোলা আছে। তাছাড়া যে সব অভিযোগ আসছে, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ১ নং ইউনিয়নে তালিকা প্রনয়নে অনিয়ম ৩০ ও ডিলারের বিরুদ্ধে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ডিলা উলহাপ্রু মারমা অভিযোগের সত্যতা স্বীবার করে বলেন, তার অনুপস্থিতি পরিবহন ভাড়াসহ ঘাতটি পুরুনের জন্য প্রথম অবস্থায় ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৮ কেজি বিতরণ করলেও পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সবাইকে ডেকে আরো দুই কেজি করে দেওয়া হয়েছে।
১ নং খাগড়াছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান আম্রে মারমা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রথম দফায় কিছুটা অনিয়ম হলেও এখন কোন অনিয়ম হচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিশ শরমিন বলেন, প্রশাসন বসে নেই। যেখানে অভিযোগ সেখানে উপস্থিত হয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে সামনেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে প্রশাসন বলছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো:আব্দুস সালাম জানান, খাগড়াছড়ি জেলার ৩৮টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৪শ ১৬ পরিবার কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমুল্যে খাদ্যশষ্য পাচ্ছে। তিনি কোথাও অনিয়ম হলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।