ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

করোনার দাপট এবং প্রধানমন্ত্রীর সাহস: বিভুরঞ্জন সরকার

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ তার মারণ-আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, সুস্থও হয়ে উঠছেন অনেকে। তবে মানবজাতিকে এখন পেয়ে বসেছে মৃত্যুভীতি। অবরুদ্ধ পৃথিবী আবার কবে মুক্ত হবে, কবে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তা কেউ বলতে পারছে না। তবে কেউ কেউ ধারণা করছেন ২০২২ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে করোনাঝড়। তারপর হয়তো আবার নতুন করে শুরু হবে সব কিছু। তখন কারা থাকবেন, কারা থাকবেন না, কেমন হবে করোনা-উত্তর বিশ্বের চেহারা- এসব নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে, চলবে। মানুষ আরো মানবিক হবে, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার পদ্ধতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক সম্পর্ক- সব কিছুতেই পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন চিন্তক-গবেষকরা।

কত মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই ধরিত্রীতে সুস্থিতি আসবে তা অজানা থাকলেও, ধরে নেয়া যায়, সংখ্যাটা একেবারে কম হবে না। অনেক ঘরেই হয়তো নতুন করে আলো জ্বলবে, কিন্তু ঘরে আবার বেদনা-বিরহও স্থায়ী হবে। এমন অদৃশ্য অথচ ক্ষমতাবান মানব-শত্রু মানুষ আগে দেখেনি। শতবর্ষ পর পর প্রাণঘাতী রোগের কথা আমরা ইতিহাস থেকে জানছি। তাহলে কেন মানুষ শতবর্ষব্যাপী রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করল না? পৃথিবীতে শক্তিমত্তা দেখানোর জন্য, আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিষ্ঠার জন্য কত আয়োজন-উদ্যোগ হয়েছে। মারণাস্ত্র তৈরির জন্য কত সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, তার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়টি হয়েছে চরমভাবে উপেক্ষিত। আজ তার মাসুল গুনছে উন্নত সভ্য বলে দাবিদার দেশগুলো। সভ্যতার এত বড় সংকট আগে আর কখনো দেখা যায়নি।

করোনা আঘাত হেনেছে আমাদের দেশেও। আমরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য সময় পেয়েছি। তবে আমরা সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। আমরা করোনার ভয়াবহতার বিষয়টি আঁচ করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, এ আর কী, কত বিপদ-দুর্যোগই তো আমরা মোকাবিলা করেছি। ঝড়-জলোচ্ছ¡াস আমাদের কাবু করতে পারেনি। সামান্য এক জীবাণু আমাদের বড় ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা যুদ্ধজয়ী জাতি। তাই করোনাবিরোধী যুদ্ধে জেতাকেও আমরা সহজ মনে করেছিলাম। করোনা যে দুর্বল শত্রু নয়, এতদিনে তা সবারই বোঝা হয়েছে।

শুরুর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে ‘সব ঠিক হ্যায়’ বলে স্বস্তির ঢেকুর তোলা হয়েছে, বাস্তবে কিছুই যে ঠিক নেই বা ছিল না- এখন দেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় টের পাওয়া যাচ্ছে। তবে করোনা যেমন তার দাপট দেখাচ্ছে, তার প্রবল তেজে ছড়িয়ে পড়ছে এক দেহ থেকে আরেক দেহে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অত্যন্ত সাহস নিয়ে, নির্ভয়তার সঙ্গে করোনা-প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নে ত্রুটি থাকে। সরকারি প্রশাসন, সরকারি দল আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দৌড়ে কুলাতে পারে না, করোনাকালেও পারছে না। যদি বিদেশ প্রত্যাগতদের দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে কঠোরভাবে আইসোলেন, কোয়ারেন্টিনে রাখা যেত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের আনন্দ ভ্রমণের সুযোগ না দিয়ে ঘরে আটকে রাখা যেত, যদি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে উৎসব ভ্রমণ থেকে বিরত রাখা যেত, যদি পোশাককর্মীদের নিয়ে অত্যন্ত দায়িত্বহীন আচরণ করা না হতো, যদি দেশের মানুষ সচেতন হতো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলত, সাময়িক কষ্ট স্বীকার করে হলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখত তাহলে আমরা করোনা মোকাবিলায় যে সফলতা পেতাম এখন তা পাব না।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সব নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ার অভিযোগ আছে।

প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতার জন্য একটি মন্ত্রিপরিষদ আছে। কিন্তু এমন নিষ্প্রভ, উদ্যোগহীন, এমনকি যথাযথভাবে হুকুম তামিলেও অযোগ্য মন্ত্রীরা (ব্যতিক্রম হয়তো আছেন, তবে তা দৃশ্যমান নয়) বাস্তবে এখন প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে বোঝা হয়ে আছেন বলেই মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো কাজ করছেন তার প্রশাসনিক টিমের সহযোগিতায়। তবে আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র মূলত জনবান্ধব নয়। যেহেতু সাধারণ মানুষের কাছে তাদের সরাসরি কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাই সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতাও কম। তারা মূলত প্রধান নিয়োগ কর্তার তুষ্টি বিধানেই তাদের সন্তুষ্টি। তাদের মধ্য সাহসের পরিবর্তে তোয়াজ করার মনোভাব থাকে। তারা সহজ কাজকেও অনেক সময় জটিল করে তোলেন। দেশে এখন সেই অবস্থাই চলছে।

আমাদের দেশের মানুষ একটু কম ধৈর্যশীল। তাড়াতাড়ি পাওয়ার আকাক্সক্ষা প্রবল। তাই দেখা যাচ্ছে, সংকট দেখা দেয়ার আগেই চারদিকে হাহাকার। দরিদ্র, অসহায়, কর্মহীন মানুষই যে কেবল জীবনধারণের তাড়নায় অস্থির হয়ে উঠছেন, তা নয়। গাড়িওয়ালা মানুষও দিন কয়েক ধৈর্য ধরতে পারছেন না। চারদিকে শোনা যাচ্ছে নাই নাই ধ্বনি। খাদ্যের জন্য আর্তনাদ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। হতে পারে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে বণ্টন ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে। যাদের প্রকৃতই সাহায্য দরকার তাদের সঠিক তালিকা এখনো করা হয়ে ওঠেনি।

কিন্তু না খেয়ে থাকার পরিস্থিতি কি দেশে সত্যি তৈরি হয়েছে? সরকারি উদ্যোগের বাইরেও কিছু রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তি, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অভাবী মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে। অভাবের কথা যতটা জোর দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, অভাব মেটানোর বিভিন্ন উদ্যোগের খবরগুলো ততটা প্রচার পাচ্ছে না বলে আমার ধারণা।

মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, দুঃসময়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংবিধান দায়িত্ব সরকারের। এক্ষেত্রে সরকারের গাফিলতি, উদ্যোগহীনতা, অব্যবস্থাপনা থাকলে তার সমালোচনা হবেই। সরকারকে দোষারোপ সব দেশেই করা হয়। হয়তো আমাদের দেশে একটু বেশি হয়। এ জন্য ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই। মানুষ সরকার এবং সরকার প্রধানের সমালোচনা করে নিজেদের মনের ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করে কিছুটা মানসিক তৃপ্তি অনুভব করে। এজন্য ঢালাওভাবে মানুষের সমালোচনা করা ঠিক না। মানুষের জন্যই তো সরকার। মানুষকে আস্থায় নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।

দেশে সরকার কিংবা সরকার সমর্থিত গোষ্ঠীর বাইরে যারা তাদের সীমাবদ্ধ সাধ্য নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু এখন জাতির অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন সেহেতু তিনি যদি এসব উদ্যোগের প্রশংসা করে অন্যদের এগিয়ে আসতে বলেন তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। যারা এখন সরকারকে অনুদার ভাবছেন, তাদেরও মনোভাবে পরিবর্তন আসবে।

ত্রাণ বিতরণের সময় কে কোন দল করে, তা বিবেচনায় না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দলমত-নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। যার অবস্থা খারাপ, দুস্থ, যার ঘরে খাবার নেই, তার ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। একই সঙ্গে ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। মানুষ এটাই চায়। যার প্রয়োজন তার হাতে ত্রাণ এবং ত্রাণ নিয়ে কোনো সামান্য দুর্নীতিও নয়। মনে রাখতে হবে অভাব মানুষকে দুর্বিনীত করে তোলে। করোনার দাপট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা তখনই দৃঢ় হবে যখন মানুষ দেখবে চোরেরা প্রশ্রয় পাচ্ছে না এবং মানুষ না খেয়ে থাকছে না।

বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তাই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।”

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print