ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

করোনাক্রান্তিতে ঘরবন্দি ঈদ যেমন কাটলো

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

চবি প্রতিনিধিঃ

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর।ধনী,গরীব নির্বিশেষে সকলে নিজের সুঃখ,দুঃখ ভাগ করে নেয় একে অপরের সঙ্গে। ঈদে বাড়ি যাওয়া,একত্র চাঁদ দেখার আনন্দ,নতুন জামা পড়া,একত্রে দল বেঁধে ঈদের জামাতে যাওয়া,বন্ধুরা ঘুরতে বেড়ানো,আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো এসবই যেন এর স্বাভাবিক চিত্র।

কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের আক্রমনের ফলে অপরিচিত হয়ে উঠেছে সব কিছু।ঘর হতে বের হওয়া পর্যন্ত আতংকের বিষয়।এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ,বর্ষের শিক্ষার্থীরা কেমন করে কাটালো তাদের ঈদ।তাই তুলে ধরা হলো।

.

এইবারের ঈদ নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে ইসলামের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র ফারাবী বলেন, করোনা ভাইরাসের দিনে ঈদের অনুভূতি নিয়ে লিখতেই যেন কেমন লাগছে। ঘরবন্দি মানুষের ঈদ ভাবনা আর কেমন হতে পারে? এক অনিশ্চিত অনুভূতিহীন সময় পার করছি আমরা। আর এই সময়ে লিখতে হচ্ছে ঈদ অনুভূতি নিয়ে।

অনুভূতি শব্দটার সাথেই কেমন যেন একটা আবেগ রয়েছে। তেমনি ঈদ শব্দের সাথেও আলাদা একটা আনন্দের আমেজ রয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এই অনুভূতি এবং ঈদ কোনো শব্দের সাথেই এবার আলাদা

কোনো মন দোলে উঠাটা কাজ করছে না। এই ভাইরাসে হয়তো আমি এখনও আক্রান্ত হইনি কিন্তু অনেক পরিবারের সদস্যই এই ভাইরাসে আক্রান্ত৷তাদের কাছে কিংবা যারা দিন মজুর অথচ কাজে যেতে না পেরে এক বেলা খাচ্ছে কী খাচ্ছে না তার কোনো হিসেব আমার কাছে থাকছে না – এমন অনিশ্চিত একটা সময়ে আসলেই ঈদের দিনটা প্রাণে দোলা দিতে পারছে না। বরং, যেদিন জানবো দেশ ভাইরাস মুক্ত সেদিন জানবো আজ ঈদ।

.

পূর্বের ঈদের কথা স্মৃতি চারণ করে রাজনীতি বিজ্ঞানের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজি খান করে বলেন,”পূর্বে সব ঈদ গ্রামে দাদুর বাড়িতে করা হতো। কিন্তু এবারই প্রথম শহরে ঈদ করলাম।গ্রামেতো সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যেত,নতুন কাপড় পড়তাম।পাড়া প্রতিবেশীরা আমাদের বাড়িতে আসতো।সকলের সম্মিলনে আনন্দ-উৎফুল্লের সৃষ্টি হতো কিন্তু এবার শহরে বাসায় আবদ্ধ থেকে ফোনে বন্ধু,বান্ধবীদের সাথে কথা বলে আর ঘুমেই ঈদ কেটে গিয়েছে।ঈদের যে আনন্দ,উচ্ছ্বাস সেরকম কোন অনুভূত হয়নি।সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করেন।

.

আগের ঈদগুলোর সাথে এইবারের ঈদের তুলনামূলক পার্থক্য করে আই.ই.আর ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত আল জুবায়ের বলেন, “পূর্বে ঈদে নামাজের পর চেনা অচেনা সবার সাথে কোলাকুলি করতাম, তাতে অন্যরকম একটা অনুভূতি আসতো,যেন সবার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি হয়ে যেত।এবার সেই অনুভূতি পাই নি,তাই মন খারাপ।এবার নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ পড়ে চুপিচুপি কারো সাথে কথা না বলে বাসায় ফিরে এসেছি।বাসায় এসে খেয়েদেয়ে ঘুমেই কেটেছে সারা দিন।প্রত্যেক ঈদে নিজ গ্রামে, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাই। সারাবছর শহরে বা বাইরে থাকার ফলে যে দূরত্ব টা সৃষ্টি হয় সেটা ঘুচে যায়। আত্মীয় স্বজনের সাথে আরো দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি হয়।সবাই আমাদের বাড়ি আসে, আমিও সবার বাড়ি যাই। কিন্তু এবার তার কিছুই হয়নি। আর প্রতিবার ঈদের পর বন্ধুদের সাথে একটা ট্যুর দিই, এবার তাও হয়নি। আমি চাই পৃথিবী দ্রুত সুস্থ হোক, আল্লাহ সবাইকে সবাইকে সুস্থ করে দিক। অবস্থা স্বাভাবিক করে দিক। আমি পূর্বের পৃথিবীতে ফিরতে চাই।”

ফিজারিজ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী পরশ মুন্সি আবার তার ঈদ উদযাপনের কথা বলতে গিয়ে বিষণ্ণ মনে বলেন,”চারিদিকে মহাবিপর্যয়ের মাঝেও দীর্ঘ একমাসের রোজার পর ঈদ আসলেও চারিদিকে ছিল কেমন শূন্যতা। ঈদের নামাজ টা পড়াও হয়ে উঠেছিল বৈচিত্র্যময়। দুরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়া।এবারের ঈদে আর ঘুরাঘুরি হলো না।কোথায় যাওয়া নেই,কোনো আনন্দ নেই,কোনো উৎসব নেই।চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে ছিলো সারাক্ষণ। একদিকে মহামারী করোনা অন্যদিকে ঘুর্নিঝড় আম্পান এর ভয়াবহতায় জীবনের অস্তিত্ব যেন মাটিতে মিশে যাচ্ছে। তবু সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া সুস্থ আছি।দিন শেষে একটাই চাওয়া। পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠুক। জনজীবন স্বাভাবিক হোক।মানুষ ফিরে যাক নিজের গন্তব্যে।দিনশেষে সবার মুখে ফুটক আনন্দের হাসি।”

.

পূর্বের ঈদের সাথে এই ঈদের তুলনা করে গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবা সুলতানা মারিয়া বলেন , আমার তো বরাবরই ঈদ ঘরে থেকেই কাটে! ।এবারও তাই! তবে আঙ্গিক কিছুটা ভিন্ন! ভিন্ন কারন:আমি বরাবরই গ্রামে ঈদ করে এসেছি! এবারো তাই! গ্রামে ঈদের আমেজটাই হয় অন্যরকম! চাঁদ রাতে আতশ বাজি ফাটানো থেকে শুরু করে বুড়ির বাড়ি পোড়ানোর মতো গ্রাম্য নীতি দিয়ে ঈদের আমেজ শুরু! বাচ্চাদের হই হুল্লা চিল্লাচিল্লিতে বাড়ি মাথায় উঠার যোগাড়!
গোল হয়ে বসে মেহেদী সন্ধ্যা!ঈদের সকালে বাড়ির সবাই, মানে পুরুষরা তাড়াহুড়ো করে গোসল সেরে নতুন জামায় আতর লাগিয়ে তৈরী হয়ে নিতো! আর আমরা সেমাই হতে বিভিন্ন রান্নায় লেগে পড়তাম!তারা সেমাই মুখে দিয়ে সবাই ঈদগাহের দিকে ধাবিত হতো!
কিন্তু এবার?

করোনার কারনে দেশে লকডাউন! দোকান পাট বন্ধ! আতশবাজি বা মেহেদী আনা হয়নি! বুড়ির ঘর পোড়ানো হয়নি!মেহেদীর আসর বসেনি! বাড়িতে সুনসান নিরবতা! তাড়াহুড়ো করে রান্নার আমেজ নেই কারন বাড়ির কেউ আতঙ্ক মাথায় নিয়ে ঈদের জামাতে যায়নি! আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের পরিবারেও করোনার ছায়া পড়েছে!মনে হচ্ছে মৃত্যুপুরীতে বাস করছি!আগে ঈদে ঘরে থাকতাম কিন্তু এরকম মৃত্যুপুরীতে না! আমি আগের মতো ঘরকুনো হলেও এবার করোনা খুব বেশিই প্রভাব বিস্তার করেছে!স্রষ্টার কাছে একটাই প্রার্থনা, যদি তিনি আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে মহামারী বিরাজ করে থাকেন তো তিনি যেন দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে মহামারী তুলে নিয়ে ভালো পথে চালিত করেন!

নিজের অন্যরকম ঈদ অনুভুতির কথা জানিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ মিশেল এইবারের ঈদের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, “এইবারের ঈদ উদযাপন ছিলো অনন্য ঈদ থেকে ভিন্ন।একবারে চাঁদ রাত থেকেই,ছিলোনা কোনো চাঁদ দেখার আনন্দ, যেখানে বিগত বছর গুলোতে বাড়ির ছোট বড় সবাই চাঁদ দেখার জন্যে নদীর পার জড়ো হতাম,আনন্দ উল্লাস করতাম।এবার সেরকম কিছু হয়নি, সবার মাঝে ছিল আতংক। এই বছর সবার সাথে হেটে ঈদগাহে যাবার আনন্দটাও খুব মিস করেছি।

এছাড়াও বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি এসবের কিছুই হয়নি।তবে এইবারের ঈদের দিনটা কাটিয়েছি একটু ভিন্যভাবে।বন্ধুদের বাসায় আনি,যার মাঝে সনাতন ধর্মের বন্ধু ছিলো বেশ কজন,ভিন্ন ধর্মের হওয়া সত্যেও সারা দিনের ঈদের আনন্দটা তাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছি।এভাবে ঘরোয়া পরিবেশেই ঈদের স্বাদ নিয়ে নিই।”

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print