
নগরীর আকবরশাহ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী চটপটি আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলার প্রত্যক্ষ সহযোগি, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকদ্রব্য, ইয়াবা ও ক্রসফায়ারে নিহত মামুনের সহযোগি হিসেবে ১৯টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামি।
থানায় এত মামলা থাকার পরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও ১৯টি মামলা কাঁধে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের আকবরশাহ এলাকায় প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে প্রশাসনের চোখে তিনি পলাতক হলেও স্থানীয় জনগণের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, আকবরশাহ থানাধীন শীর্ষ সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন প্রকাশ ঝটপটি আলাউদ্দিন একই এলাকার মৃত শেখ আহম্মদের পুত্র। যার বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় জিআর মামলা নং- ১(৯)২০১৭, আনোয়ারা থানার জিআর মামলা নং-৭(৯)২০০২, সদরঘাট থানার জিআর মামলা নং-৪(৮)২০১৯, ইপিজেড থানার জিআর মামলা নং-১৬(৬)২০১৯, ডবলমুরিং থানার জিআর মামলা নং-২৭(৭)২০২০, কোতোয়ালী থানার জিআর মামলা নং-১১(১০)২০১৬, কোতোয়ালী থানার জিআর মামলা নং-১২(১০)২০১৬, পাহাড়তলী থানার জিআর মামলা নং-৬(৫)২০০৭, পাহাড়তলী থানার জিআর মামলা নং-৩০(২)২০০৯, পাহাড়তলী থানার জিআর মামলা নং-৮(১১)২০০০, পাহাড়তলী থানার জিআর মামলা নং-৯(১১)২০০০, পাহাড়তলী থানার জিআর মামলা নং-৫(৮)২০০৩, পাহাড়তলী থানার জিআর মামলা নং-৭(৫)১৯৯৯, ডবলমুরিং থানার জিআর মামলা নং-৭(১)২০০৫, আকবরশাহ থানার জিডি নং-১২২০ (তারিখ ২৮-০২-২০১৫ইং), কোতোয়ালী থানার জিডি নং-৩০০,
(তারিখ ০৫-০২-২০০৯ইং), কোতোয়ালী থানার জিডি নং-১৪৩৬, (তারিখ ২৫-০১-২০০৯ইং), পাহাড়তলী থানার জিডি নং-৫৪১, (তারিখ ১৩-১০-২০০৮ইং), পাহাড়তলী থানার জিডি নং-৩৮, (তারিখ ০১-১০-২০০৮ইং), পাহাড়তলী থানার জিডি নং-৫২৮, (তারিখ ১৩-০২-২০০৫ইং), পাহাড়তলী থানার জিডি নং-১৫৭, (তারিখঃ ০৪-০১-২০০৪ইং) আরো একাধিক জিডিসহ মোট ১৯ টি মামলা রয়েছে। বেশির ভাগ মামলায় তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।
আকবর শাহ এলাকার স্থানীয়রা জানান, ঝটপটি আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশের কাছে সবসময়ই সে অধরা। মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে দেখা মিললেও পুলিশ তাকে নাকি খুঁজে পায় না।
ব্যবসায়ি কিবরিয়া জানান, ‘আলাউদ্দিন এতোটাই বেপরোয়া যে, তাকে কেউ থামাতে পারছেন না। কারণ তিনি থানার সোর্স বলেও পরিচয় দেন। দালালিও করেন। সে একজন পেশাদার সন্ত্রাসী হিসাবে এলাকাবাসি জানে। তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশের কাছে মানুষেরও অসংখ্য অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরছে না।’ ভুক্তভোগিরা একাধিক মামলার এই আসামিকে গ্রেফতারে মহানগর ডিবি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।
অন্যদিকে, গত ১৪ নভেস্বর শনিবার ১৯ মামলার আসামী এই আলাউদ্দিনের পক্ষে সাফায় গেয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তার স্ত্রী বিবি মরিয়ম। সম্মেলনে মোহাম্মদ জাকির হোসেন নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধারে কথিত মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্বোধন করেছেন। যা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে প্রভাব ফেলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আলা উদ্দিনের স্ত্রী আরও অভিযোগ তুলেন, এসআই মো: হায়দার এবং মাহবুব আলম, মুকুল মিয়াসহ অন্যান্য ৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও তার ছেলেদের সহায়তা করছেন। এমনকি নামে বেনামে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এর পক্ষে কোন সঠিক তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। প্রকৃত ঘটনা হলো-মুক্তিযোদ্ধার আপন ভাতিজা চটপটি আলাউদ্দিনের ভয়ে পৈত্রিক ভিটায়ও থাকতে পারছে না। মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন সন্ত্রাসী ভাতিজার কাছে শারিরীকভাবে বারবার নির্যাতিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন এর বসতভিটা খালি পড়ে আছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আলাউদ্দিনের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে রয়েছেন। তার ভাড়াঘরে কেয়ারটেকার থাকলেও বর্তমানে বসতভিটা দেখার মতো কেউ নেয়। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, মো: জাকির হোসেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভাতিজার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কাট্টলীর নিজ বসত ভিটায় থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন এর উপর হামলা করে মারধর করেন। তার ছোট ছেলে পুলিশ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনকেও রক্তাক্ত করে সে সময়।
স্থানীয়রা তথ্য দেন জানান, এই ঝটপটি আলাউদ্দিন গভীর সমুদ্রে ট্রলারে মাছ শিকারের নামে মাদক পাচারে জড়িত। অতীতে কোষ্টগার্ড সেই ট্রলার ধাওয়া করলে পালিয়ে যাওয়ার সময় পায়ে গুলি লাগে। বর্তমানে সে স্থানীয় থানা পুলিশের সোর্স। তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মামলার ভয় ও কথা না শুনলে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন নিরীহ মানুষদের।
এছাড়াও তথ্য পাওয়া যায়, ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক এক ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন জব্দকৃত ইয়াবার মালিক আলাউদ্দিন। তদন্তে আলাউদ্দিনের ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। পরিবর্তীতে আলাউদ্দিনের এর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে র্যাব।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, মূলত আলাউদ্দিন ফুসকা ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় চাঁদাবাজি কাজে জড়িত। সিটি গেইটের পাশে সেবা হোটেল নামে ফুসকার দোকানটি সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা। বিগত সময়ে কয়েকবার জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট আকবরশাহ থানার সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকান ভেঙে উচ্ছেদ করলেও। পুনরায় দখল নেয় তিনি।
বর্তমানে ১৯ মামলার আসামী আলাউদ্দিন তার ব্যক্তিগত অপরাধ ও মামলার থেকে রক্ষা পেতে ভিন্ন কৌশল নেন। স্থানীয় কিছু হাইব্রিড নেতাদের তদবিরে পুলিশ প্রশাসনকে প্রভাবিত করে মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন ও তার পরিবারকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে চলেছেন।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে আরো জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেনকে বিবাদী করে সিএমপি আকবরশাহ থানার শীর্ষ সন্ত্রাসী চটপটি আলাউদ্দিন ১৯টি ফৌজদারী মামলা করেন। এসব মামলায় নোটিশবিহীন একতরফা ৬টি পুলিশী প্রতিবেদনের উপর ভরসা করে মহামান্য হাইকোর্ট এর একক কেঞ্চ বিচারপতি খিজির আহম্মদ চৌধুরী এর সিভিল রুল নং-৩০৩ (কন) ২০২০ মূলে গত ৫ নভেম্বর ফাইলিং করে ১৬ নভেম্বর শুনানি করেন। বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন।
অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেন এর পুত্র জাহিদ হোসেন বলেন, আলাউদ্দিন এতটাই ক্ষমতাধর যে আমরা ভয়ে নিজ পৈত্রিক বাড়িতে যেতে পারি না। বাড়িতে গেলে তার বাহিনী নিয়ে দা-কিরিচ শাবল দিয়ে মেরে ফেলতে তেড়ে আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি আকবর শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহির উদ্দিন পাঠক নিউজকে বলেন, আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলায় ওয়ারেন্ট আছে কিনা জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। তবে, আমার জানামতে, তার বিরুদ্ধে ২টি মামলার ওয়ারেন্ট ইস্যু রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৭ মে নগরীর আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর (প্রকাশ আলমগীর মাহমুদ) সহ ০৭ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো: রহমত আলীর আদালতে একটু ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিরোধপূণ জায়গা থেকে আদালতের আদেশ অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধাকে উচ্ছেদে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করায় মাদকব্যবসায়ী ও পুলিশের কথিত সোর্স চটপটি আলাউদ্দিনের পক্ষ নিয়ে আইনের ব্যর্থ ঘটানোর দায়ে ওসিসহ বিবীদের বিরুদ্ধে ০৩কোটি ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০টাকা ক্ষতিপূরন মামলা দায়ের করিলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে। মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলী এলাকায় নিজ জায়গায় ২০১৩ সালের ০৩ এপ্রিল শুধুমাত্র গায়ের জোরে ২৬ বছর দখল করে রাখায় পৈত্রিক সম্পত্তি আদালতের আদেশক্রমে নিবাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ, অ্যাডভোকেট কমিশনার, জেলা জজ আদালতের নাজির সহায়তা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা শেষে চটপটি আলাউদ্দিন হতে উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধা মো: জাকির হোসেনকে বুঝিয়ে দেন।
পরবর্তীতে আলাউদ্দিন জায়গার মালিকানা দাবী করে আপিল বিভাগে আপীল আর্ট্রিবিশন দায়ের করেন। আপিল বিভাগ বিরোধপূণ জায়গা স্থিতিশীল রাখিয়া নিম্ন আদালতের মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদেশ প্রদান করেন। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও বিগত ০৮ এপ্রিল ২০১৮ সালে আকবরশাহ থানার তৎকালীন ওসি আলমগীর এর প্রত্যক্ষ সহায়তায় আলাউদ্দিন তার বাহিনী নিয়ে জোড়পূর্বক জাকির হোসেন ও তার পরিবার এবং ভাড়াটিয়াদের ঘর থেকে বের করে দেন।
বর্তমানে জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জানমাল ও সম্মানের ভয়ে যেতে পারছে না মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার। গ্যাস, বিদ্যুৎ, আয়কর ও পৌরকর ব্যবহার না করেও ৩ বছর ধরে পরিশোধ করে যাচ্ছেন। বিষয়টি তোয়াক্কা না করে আলাউদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাদীর ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতিপূরন দাবি করেন।