
আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার লালদিয়ার চর থেকে সেখানকার চারযুগ ধরে বসবাসবারী ১০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদের পর ৫২ একর জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কোন ধরণের অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই আজ সোমবার (১ মার্চ) সকাল থেকে দিনভর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। তবে উচ্ছেদের আগেই অনেক বাসিন্দা নিজেদের সহায় সম্পদ সরিয়ে নিয়ে নিজেরাই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের ফেলে যাওয়া ভবন-স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে অবৈধ দখলে থাকা ৫২ একর জায়গা বুঝে নিয়েছে।

উচ্ছেদ ঘোষণার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে অনেক বাসিন্দা সেচ্ছায় অন্যত্র চলে যান। যারা শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন উচ্ছেদ ঠেকানো যায় কিনা তারা আজ সকাল থেকে নিজ উদ্যোগে বাসিন্দারা বসতঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। অনেকে ভাঙাবাড়ি, আসবাব বিক্রি করে দেন নামমাত্র মূল্যে। কেউ কেউ রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকের অভাবে মালপত্র নিয়ে অসহায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
সকালে বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লালদিয়ার চর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য এলাকায় টহল দিচ্ছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান এলাকা উচ্ছেদের আওতার বাইরে রাখা হবে।
এদিকে উচ্ছেদ চলাকালে সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন
চট্টগ্রামের লালদিয়া চরের জায়গাটির মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন জায়গাটা আমাদের প্রয়োজন। পিসিটির (পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল) ব্যাকআপের জন্য। এর আগে ২৬ একর উচ্ছেদ করেছি। ৫২ একর জায়গা আজ পুনরুদ্ধার করতে পারবো। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৯০ ভাগ চলে গেছেন। তারা গরিব হলেও আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

পতেঙ্গা বোটক্লাব এলাকায় ব্রিফিংকালে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উদ্বুদ্ধ করেছি যাতে বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় চলে যায়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৯০ ভাগ চলেও গেছে। বল প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। আমাদের এলাকায় বেড়া দিয়ে দেব, যাতে কেউ দখল করতে না পারে। আনসাররা এলাকাটি পাহারা দেবে।’
তাদের পুনর্বাসন করা প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অবৈধ দখল উচ্ছেদ হলে সরকার তৃণমূলদের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা তালিকা পাঠিয়েছি।’
উল্লেখ্য হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’র দায়েরকৃত রিটের(রিট নং-৬৩০৬/১০) প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পতেঙ্গায় কর্ণফুলী লালদিয়ার চর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত ডিসেম্বরে পাঠানো হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী দুই মাসের ওই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ৯ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদকৃত জায়গায় কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করার জন্য ইয়ার্ড তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র আরও জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২ মাসের মধ্যে কর্ণফুলী নদী তীরের বন্দর এলাকা লালদিয়ার চর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ দেন। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, ডিসি, র্যাব কমান্ডার, সিডিএ চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এই মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুরাদ রেজা।