
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, ৬০ দশকের চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগ (দিশারী) প্রাক্তন সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর (৭৫) এর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ভূযা দলিলের মাধ্যমের আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার বিকালে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসেন চৌধুরীর আদালতে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাদি হয়ে ফৌজদারী মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় জাল দলিল তৈরীর চক্রের ৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। তারা হলো-পটিয়া শিকলবাহা এলাকার বাসিন্দা মৃত রাম লাল নাথের পুত্র দিলীপ কুমার নাথ (৫০), মৃত প্রফুল্ল কুমার নাথের দুই পুত্র রনজিত কুমার নাথ (৪৭) ও বিপ্লব কুমার নাথ (৩৪), মৃত সুভাষ চন্দ্র নাথের ৪ পুত্র সঞ্জয় কুমার নাথ (৩০), সুমান কুমার নাথ (২৮), সুজন কুমার নাথ (২৭), সজল কুমার নাথ (২৬) ও কর্ণফুলী থানাধীন মোঃ শাহ্ আলম সওদাগরের পুত্র মোহাম্মদ আবু আলম (৫২।
বাদির পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন মানবাধিকার সংগঠন বিএইচআরএফ। বাদীর আইনজীবি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি পাঠক ডট নিউজকে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জাল দলিল জব্দ করে এক্সপার্ট রিপোর্টসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ওসি কর্ণফুলী সিএমপি’কে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, বাদী ১৯৯৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে রেজিস্টার্ড কবলা দলিল মূলে সাবেক পটিয়া বর্তমানে কর্ণফুলী থানাধীন চর পাথরঘাটা মৌজার বিএস ৪৪৯ খতিয়ানের ১৫২০ দাগের (নামজারী ৫৩৩) ২৩ গন্ডা ১ কড়া নাল জমি ক্রয় করে নিজ নামে খতিয়ান তৈরী করে নিয়মিত খাজনা আদায় করে আসছেন।
উল্লেখিত জায়গটি ২০০৩ সালের ১২ এপ্রিল একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে বন্ধক বন্দক রেখে বাদীর ঋণ গ্রহণ করেন। পরে তিনি ২০১২ সালের ১৪ মে ব্যাংকের সমুদয় ঋণ পরিশোধ করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের জমি বন্ধকমুক্ত করেন ।
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খাজনা দিতে গিয়ে জানতে পারেন যে, দিলীপ কুমার নাথ গং ২০০৯ সালের ৪ঠা আগষ্ট তারিখ ৪৮০০ নং বাদীর নামে বিক্রয় ভুয়া কবলায় নামজারী খতিয়ান তৈরী করে।
অথচ বাদী জানান তিনি করো নিকট ঐ জমি বিক্রয় করেন নি। তা সত্ত্বেও তার নাম স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ব্যক্তিকে দাতা সাজিয়ে এই জাল দলিল তৈরী করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
পরবর্তীতে সকল আসামী (১-৭ নং আসামীরা) উক্ত সম্পত্তি মৌরসী সম্পত্তি দেখিয়ে পুণরায় ৮ নং আসামী শিল্পপতি মোঃ আবু আলমকে বিক্রয়ের পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া খরিদা দলিল সৃষ্টি করে। পরে বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভুমি অফিস ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ভুয়া নামজারী খতিয়ান সমূহ বাতিল করে ।
এদিকে জাল দলিলের ভিত্তিতে আসামী আবু আলম গং মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আলম চৌধুরীর সম্পত্তি জবর দখলের চেষ্টা চালালে তিনি ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে সরাসরি আবেদন করেন ।
পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক কেশর চক্রবর্তী তদন্ত শেষে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় মর্মে রিপোর্ট পেশ করেন। বাদী এই ব্যাপারে দুদক মহাপরিচালকের বরাবরে ফৌজদারী অভিযোগ দায়ের করেন। দুদক অভিযোগটি সরাসরি আদালতে দাখিলের পরামর্শ দিলে তিনি আজ আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেন।
আদালতে তাকে আইনী মানবাধিকার সংগঠন বিএইচআরএফ এবং বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মানবাধিকার আইনজীবীবৃন্দ যথাক্রমে এডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্সান, এডভোকেট মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, এডভোকেট ফিরোজ আহাম্মদ, এডভোকেট প্রদীপ আইচ, এডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ, এডভোকেট হাসানসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।