
করোনা মহামারীর এই কান্তিকালে হঠাৎ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১৪ চিকিৎসককে একযোগে বদলি করা হয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে চিকিৎসায় সংকট তৈরী করবে আশঙ্কা করছে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠান ক্যাব।
জানাগেছে, গত রবিবার ও সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের সহস্রাধিক চিকিৎসককে বদলির আদেশ দেয়া হয়। সেখানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১৪ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে, কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করার কথা বলা হয়েছে। আগামীকাল বুধবারের মধ্যে বদলি হওয়া চিকিৎসকদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, “হাসপাতালের ১১৪ জন চিকিৎসককে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কোভিড ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসকরাও আছেন। তাতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। তিনি বলেন, সারাদেশেই চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে। সে হিসেবে চট্টগ্রামেও হয়েছে। তবে আমাদের এখনও রিপ্লেসমেন্ট দেওয়া হয়নি।
এদিকে চমেক থেকে একযোগে ১১৪জন চিকিৎসককে বদলীর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এক বিবৃতিতে বলা হয়- করোনা মহামারীর কঠোর বিধি নিষেধ বা লকডডাউন চলাকালীন সময়ে চিকিৎসকদের এ গণবদলী করোনায় চিকিৎসায় সংকট তৈরী করবে।
ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলা নয়, এতদাঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের সেবা প্রদানের একটি জরুরি প্রতিষ্ঠান। তাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া এই জরুরি অবস্থায় হটাৎ বদলী করোনা আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের মাঝে জরুরি সেবা প্রদানে কিছুট হলেও সংকট তৈরী করবে। তাই অবিলম্বে এই জরুরি সময়ে এ ধরণের হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহবান জানিয়েছেন।
বিবৃতিদাতা নেতৃবৃন্দ হলেন- ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করছেন চিকিৎসক ও এর সাথে জড়িত নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, টেকনেশিয়ানসহ অন্যরা। যেহেতু লকড ডাউন চলমান, সাধারণ জনগনের চলাচল নিয়ন্ত্রিত আর এই সময়ে বদলীকৃত চিকিৎসকদের বদলীকৃত স্থানে স্থানান্তর ও যোগদান স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কঠিন হবে। আর এই সময়ে এই সমস্ত চিকিৎসকদের সেবা গ্রহীতা সাধারন ও কভিড রোগীরা তাদের কাংখিত সেবা প্রাপ্তিতে বিঢম্বনার শিকার হতে হবে। ফলশ্রুতিতে জরুরি চিকিৎসা সেবায় সংকট তৈরী করবে। এর বাইরে বদলীকৃতদের রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়নি এবং দেয়া হলেও নতুনদের দায়িত্বগ্রহন করে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা অনেক স্থানে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন চিকিৎসা সেবা একটি মহান মানবিক পেশা। মানুষের জীবন বাঁচানোই এই পেশার মূল কাজ। আর করোনা যেহেতু স্বাস্থ্য সংকট, সেকারনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এখানে মূখ্য। অথচ যুদ্ধের ময়দানেও চিকিৎসকরা আহত সৈনিকের চিকিৎসা সেবা দিয়ে জীবন বাঁচান। বাংলাদেশের করোনা মহামারী সংকটে অনেক চিকিৎসকের সাহসী ভূমিকায় জাতি গর্বিত।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন চিকিৎসকদের বদলী নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে নানা অনিয়মের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। জনগনের স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিতে চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত চিকিৎসকদের বদলীই স্বাস্থ্য খাতে শৃংখলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। এর সাথে অন্যান্য আনুসাংগিক লজিস্টিক সুবিধাদি, অবকাঠামোগত সমস্যাগুলিও দ্রুত সমাধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সাথে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সেবাগ্রহীতা ও ভোক্তাদের অংশগ্রহনও নিশ্চিত জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় একযোগে দেশব্যাপী চিকিৎসকদের বদলীর ঘটনা সময়যোপযোগী হলেও বদলীর জন্য এখন উপযুক্ত সময় এখন নয় বলে মন্তব্য করে করোনা মহামারীর প্রকোপ কমলে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।