
মালিকের ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে অপহরণ ও নাটক সাজিয়েও রেহাই পেলেন না নগরীর আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান সেন্টারের দি সন্দ্বীপ জুয়েলার্সের কর্মচারী সুদীপ্ত সাহা প্রকাশ টিংকু (৩৫)। অবশেষে তাকে ধরা পড়তে হল। উদ্ধার হয়ে ১২ লাখ টাকা।
টিংকুর ভাষ্যমতে গতকাল শুক্রবার সকালে এটিএম বুথ থেকে ১২ লাখ টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন। পথেই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে নেয় ১২ লাখ টাকা। হুমকি দেয় ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর। এরপর বান্দরবানের পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে! – এভাবেই নিজের ১২ লাখ টাকা ডাকাতির বর্ণনা দেন সন্দ্বীপ জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী প্রদীপ বণিক। কিন্তু সিসিটিভির একটি ফুটেজে সন্দেহের তীর ঘুরে যায় কর্মচারী টিংকুর দিকেই! এরপর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বীকার করেন, নিজেই সরিয়েছেন ১২ লাখ টাকা! মালিককে বিশ্বাস করাতেই সাজিয়েছেন এই নাটক! গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দিনভর আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ ও টাকা ছিনতাই’ এর ঘটনা। মধ্যরাতে টিংকুর বোনের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের পর শেষ হয় সব জল্পনা কল্পনার।
আজ দুপুর ১২ টায় ডবলমুরিং থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ কমিশনার মোঃ আব্দুল ওয়ারীশ। এসময় অতিরিক্ত উপ কমিশনার পংকজ দত্ত , সহকারী কমিশনার মোঃ মাহামুদুল হাসান মামুন,অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন, পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা, উপ পরিদর্শক নিপু বিশ্বাস, মোঃ শরীফ উদ্দিন, অর্ণব বড়ুয়া, সহকারী উপ পরিদর্শক কাজী সাইফুল, সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোঃ আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, ‘ প্রদীপ বণিকের অভিযোগ ছিল পুলিশ পরিচয়ে তার ১২ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা বিশ্লেষণ করে শেষ পর্যন্ত সেই টাকা উদ্ধার করা হয় তারই কর্মচারী টিংকুর কাছ থেকেই!’
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, টিংকু প্রদীপ বণিকের খুবই বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার এটিএম কার্ডের সব পিনই টিংকুর জানা৷ আগের দিন রাতেই তার ৪ টি এটিএম কার্ড টিংকুকে দিয়ে দেন। পরদিন ১২ লাখ টাকা তুলে ১১ টায় বাসায় ফেরার কথা তার। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত না আসায় এবং ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার খোঁজ শুরু করেন প্রদীপ। এরপর ৪ টায় ফোন করে টিংকু জানান, সকাল সাড়ে ১১ টাকার দিকে আগ্রাবাদ সিএন্ডএফ ভবনে অবস্থিত একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে আসার সময় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস তার সামনে থামে। এসময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৪-৫ জন লোক তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। তিনি গাড়িতে উঠতেই তার সাথে থাকা ১২ লাখ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তার কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে মামলা দেওয়ার ভয় ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে গাড়ি বান্দরবানে গিয়ে থামে। সেখানে হাত ও চোখ বেঁধে তাকে পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘টিংকু খুবই চালাক। এ ঘটনা পুলিশকে জানালেও তার কল লোকেশন যেন বান্দরবান আসে সেজন্য নিজেই সেখানে চলে যান! আবার সিসিটিভিতে তার বর্ণিত সেই মাইক্রোবাসও বুথ অতিক্রম করতে দেখা যায়। কিন্তু সেই গাড়িতে তাকে তুলে নেওয়ার তথ্য না পাওয়ায় সন্দেহ জাগে টিংকুর উপর। এরপর লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন তিনি। এরপর তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকায় তার বোনের বাসা থেকে ১১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এভাবে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা হয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ১২ লাখ টাকা। ‘
গ্রেফতার টিংকু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৩নং ওয়ার্ড মহাজন বাড়ীর অসীম সাহার ছেলে। তার বিরুদ্ধে প্রদীপ বণিক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।