
পাঠক প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে স্কুলছাত্রের আত্মহত্যার আলোচিত ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কমিটি বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ডবলমুরিং থানার সাবেক ওসি সদীপ কুমার দাশকে ফেনীর আলোচিত সোনাগাজী থানায় পদায়নের জন্য তোড়জোড় চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ চাপা দিতে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা তদবীর অব্যাহত রেখেছে ওসি সদীপ কুমার।
জানাগেছে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে আগ্রাবাদের এক স্কুলছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায় করা পুলিশের তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছিল।
আরও খবর: কিশোর মারুফ আত্মহত্যা: এসআই হেলাল বরখাস্ত, ওসি সদীপকে শোকজ
শাস্তির সুপারিশপ্রাপ্ত ওসি সদীপ কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশের ছোটভাই। গত ২৯ এপ্রিল ফেনী জেলা পুলিশে যোগদান করেন সদীপ।
অভিযোগ আছে, বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে ওসি সদীপকে ফেনীর আলোচিত সোনাগাজী থানায় পদায়নের জন্য তোড়জোড় চলছে। এ থানায় ‘ওসি হতে উঠেপড়ে লেগেছেন সদীপ নিজেও। এজন্য উপর মহলে সদীপ মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে। ভাই প্রদীপের মত এই সদীপের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিচার বহির্ভূত ক্রসফায়ার দিয়ে অসংখ্য ব্যাক্তিকে হত্যার অভিযোগ।
আরও খবর: আগ্রাবাদে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১
সুত্র জানায় ২০২০ সালের ১৬ জুলাই রাতে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী এলাকার বাসায় গিয়ে সাদমান ইসলাম মারুফ নামে এক স্কুলছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা এবং থানায় নিয়ে তার মা-বোনকে মারধর করেন ডবলমুরিং থানার তৎকালীন এসআই হেলাল।
এই অপমান সইতে না পেরে ওইদিন রাতেই মারুফ আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে এসআই হেলালকে প্রত্যাহার করে নেয় সিএমপি কর্তৃপক্ষ। মহানগর ডিবি’র (পশ্চিম) তৎকালীন উপকমিশনার (বর্তমানে ডিসি, সিটি এসবি) মঞ্জুর মোর্শেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান।
গত ২০ জলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান উপকমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ। পরে একই ঘটনার প্রেক্ষিতে এসআই হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এসআই হেলালকে চাকরিচ্যূত করা হয়। এ ঘটনায় ২৭ জুলাই মারুফের মা বাদি হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে এসআই হেলালের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পাশাপাশি অধঃস্তন কর্মকর্তার সুশৃঙ্খল আচরণ নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতায় তৎকালীন ওসি সদীপ কুমারকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশও করা হয়। এছাড়া ওসি সদীপকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়। কিন্তু ‘রহস্যজনক’ কারণে সদীপের বিরুদ্ধে সব ‘অ্যাকশন’ থমকে যায়। পরে তাকে সরিয়ে দেয়া হয় ডবলমুরিং থানা থেকে।
স্কুলছাত্র মারুফের আত্মহত্যার ঘটনার রেশ না কাটতেই ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে ঘটে যায় নৃশংস হত্যাকান্ড। সেদিন রাতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যা করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) লিয়াকত আলী। গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকলে মেজর (অব.) সিনহার গলায় পা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন সদীপের আপন ভাই ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। মামলার অভিযোগপত্রে ঘটনার বর্ণনায় এসব উঠে আসে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খুনের মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপ কুমার দাশ। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার কারাগারে বন্দি আছেন।
আরও খবর: ভয়ঙ্কর এক ওসির নাম প্রদীপ কুমার দাশ
একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, গ্রেফতারের পর বড় ভাই প্রদীপ কুমার দাশকে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ছুটি না নিয়ে কক্সবাজার আদালতে ছুটে গিয়েছিলেন ওসি সদীপ কুমার দাশ। কিন্তু সেসময় তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি শৃঙ্খলা ভংগের কোন অভিযোগ। সিএমপির সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
ওসি সদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, “বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার দেখছে। হয়তো প্রক্রিয়াটি চলমান আছে।”
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ওসি সদীপের শাস্তি কেন হলো না, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সিএমপি। সোনাগাজী থানায় পদায়ন বাগিয়ে নিতে ‘উপর মহলে’ ওসি সদীপের মোটা অংক দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করেননি ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ৩১ জানুয়ারি এসআই হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন সদীপ কুমার দাশ। ২০১১ সালের ২৯ জুন ইন্সপেক্টর পদে তিনি পদোন্নতি পান। ২০০১ সালে এসআই হিসেবে যোগদানের পর কক্সবাজার, সিএমপি’র রিজার্ভ শাখা, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানা, কুমিল্লার বুড়িচং থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর প্রথমে পিবিআই সদর দপ্তর, এরপর সিএমপি সদর দপ্তর, পাহাড়তলী, কোতোয়ালী থানা, আকবরশাহ থানা এবং ডবলমুরিং থানায় কর্মরত ছিলেন সদীপ। তার জম্ম ১৯৭৬ সালের ১৪ নভেম্বর। গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে। বাবার নাম মৃত হরেন্দ্র লাল দাশ।