
লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের ভেতরেই ভিন্নমত। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি বলছে, এতে তাদের সায় নেই। কারণ তারা এমন কোনো পরামর্শ দেননি। সরকারের তরফে সরাসরি কোনো বক্তব্য আসেনি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নানামুখী চাপের মুখে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা শুধু সাংঘর্ষিক নয়, বলা চলে আত্মঘাতী। কারণ সংক্রমণ যেখানে আকাশচুম্বী সেখানে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলে এর পরিণতি কি হবে তা বুঝতে সাইন্স বুঝার দরকার নেই।
জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে সংক্রমণ বাড়বে। সর্বোচ্চ সংক্রমণের পরদিন লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত কীভাবে হতে পারে? যেখানে আমাদের আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল। সেখানে আমরা নিলাম উল্টো সিদ্ধান্ত। এখন ভাইরাস তো বসে থাকবে না। সে তার কাজ করে যাবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন একই ভাষায় বলেছেন, ঈদ পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও বেড়ে যাবে। তার মতে, শপিংমল ও পশুরহাট খোলা থাকলে সংক্রমণ বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, আমি বুঝতে অক্ষম। গত ঈদের অভিজ্ঞতার পরও আমরা কেন এই সিদ্ধান্ত নিলাম।
কমিটির আরেকজন সদস্য ইকবাল আর্সলান বলেন, এই সিদ্ধান্তে আমরা সবাই হতবাক হয়েছি। লকডাউন আটদিন শিথিল করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির একদিন পর বুধবার নতুন করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বলা হয়েছে, শিথিলকালীন সময়ে পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্রে যাওয়া যাবে না। পরিহার করতে হবে জনসমাগম ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। বুধবার মধ্যরাত থেকে লকডাউন শিথিল হওয়ার কথা। কিন্তু সকাল থেকে ফেরি ঘাটগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘ যানজটও হয়েছে সড়কে।
টিকার জন্য বিদেশগামী যাত্রীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিশেষ করে ফাইজারের টিকা। সৌদি আরব ও কুয়েত শর্ত দিয়েছে, ফাইজারের টিকা না নিলে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যে কারণে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভিড় করেছিলেন প্রবাসীরা। কিছু সময় টিকা দেয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আচমকা তা বন্ধ করে দেয়। এরপর প্রবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। টাকার বিনিময়ে টিকা দেয়ার অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু সংখ্যক প্রবাসী। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, কম মুল্যে চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনা হচ্ছে। তবে ঠিক কতদামে টিকা কেনা হচ্ছে মন্ত্রী তা খোলাসা করেননি। ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১০ জন। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৮৩ জন। আগের দিনের তুলনায় মৃত্যু আর সংক্রমণ বেড়েছে। সূত্র : voabangla.