
দেশবরেণ্য গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীরের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে ফোন করলে তার স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর বলেন, ফকির আলমগীর বর্তমানে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শুক্রবার রাত সোয়া ১২টায় তিনি বলেন, ফকির আলমগীর করোনায় আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে সুরাইয়া আলমগীর জানিয়েছিলেন, গত বুধবার ফকির আলমগীরের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এজন্য তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। এখন তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। খবর অনলাইনের।
ফকির আলমগীরের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ॥ এর আগের খবরে স্টাফ রিপোর্টার জানান, একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে কোভিড ইউনিটে সিসিইউতে ভর্তি আছেন। খবরটি জনকণ্ঠকে জানালেন তার ভাই ফকির সিরাজ। তিনি বলেন ভাইয়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
এর আগে ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর জানান, গত বুধবার ফকির আলমগীরের করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় ওই দিন রাত ১টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে মারাত্মকভাবে। শরীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। শুক্রবার তার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতির দিকে গেলে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয় এবং এ পজিটিভ (অ+)প্লাজমা দেয়া হচ্ছে।
ষাটের দশক থেকে গণসঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে শামিল হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন।
‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসঙ্গীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।