
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে এক ছাদের নিচে মিলবে সকল ধরনের জরুরি সেবা।
আজ শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ফিতা কেটে ইমারজেন্সি কেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আদলেই এখানে চিকিৎসাসেবা পাবেন রোগীরা।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে জরুরি রোগ নির্ণয়ে যুক্ত করা হয়েছে বেশ কয়টি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম। এর মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম, ইকো কার্ডিয়াগ্রাম, পোর্টেবল এক্স-রে, ইসিজি ও এনালাইজারসহ অন্যান্য বেশ কয়টি সরঞ্জাম রয়েছে। এখন জরুরী বিভাগেই এসব পরীক্ষার সুবিধা পাবেন রোগীরা। রোগীদের পরীক্ষার জন্য আগের মতো ওয়ার্ডে-প্যাথলজিতে ঘুরতে হবে না। এখন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবায় মেডিসিন, সার্জারি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক, নাক-কান-গলা এবং অ্যানেসথেসিয়াসহ প্রয়োজনীয় সব বিভাগের একজন করে কনসালটেন্ট সার্বক্ষণিক (শিফট ভিত্তিতে) নিয়োজিত থাকবেন। চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কক্ষও প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), ৬টি হাই ডিপেন্ডেড ইউনিট (এইচডিইউ) ও পর্যায়ক্রমে ৪টি আইসিইউ শয্যা যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে।

জরুরী বিভাগকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের রূপান্তরে কাজ করতে চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় এ অর্থ বরাদ্দের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়।
ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে রোগীদের জন্য একশটি শয্যা রাখা হচ্ছে জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন রোগী এলে প্রথমে এখানে চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণে রাখবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হলে সেটাও এখানে করা হবে। এর মধ্যে যেসব রোগীর আর চিকিৎসা প্রয়োজন হবে না বা বাসায় চিকিৎসা নিতে পারবেন, তাদের বিদায় করে দেওয়া হবে। যেসব রোগীর আরও দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, শুধু সেসব রোগীকেই আন্তঃবিভাগে ভর্তি দেওয়া হবে। মোটকথা, একজন রোগী জরুরি বিভাগে আসার পর জরুরি সব ধরনের চিকিৎসা যাতে এখানেই (ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে) পান, সে আয়োজন করা হয়েছে।
চমেক হাসপালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চিটাগাং ক্লাবের চেয়ারম্যান নাদের খান, চমেকের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান।
উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী প্রমুখ।
উদ্বোধনের পর শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারি সব হাসপাতালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপতালে এই ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের জরুরি সেবা। বহুলকাঙ্খিত এ ইমারজেন্সি কেয়ার চালুর ফলে এক ছাদের নিচে মিলবে সকল ধরনের জরুরি সেবা। এরফলে একজন রোগীর প্রাথমিক জরুরি সেবাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবাটুকু এই সেন্টারে পাবে। ফলে তাকে মূল ওয়ার্ডেও যেতে হবে না অনেকাংশে। এতে করে হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডগুলোর ওপর চাপ কমবে। এই কাজে চট্টগ্রাম ক্লাবসহ এখানকার বিত্তশালীরা এগিয়ে এসেছেন।’
এর আগে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে পুরাতন জরুরি বিভাগ ও ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ড নিয়ে ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ার নামে আধুনিক জরুরি বিভাগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ৩১ হাজার বর্গফুটের নতুন ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের থাকবে মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, পেডিয়াট্রিক্স, আইসিইউ/অ্যানেস্থেসিয়া এ ৬টি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে চালু হলে রোগী ভর্তি, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা মিলবে। ফলে সংকটাপন্ন রোগীদের নিয়ে ছুটতে হবে না ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। এতে রোগীদের হয়রানি ও বিড়ম্বনা বহুলাংশে কমে যাবে।
উল্লেখ্য, হাসপাতাল প্রশাসনের তথ্য মতে- জরুরী বিভাগের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি হন হাসপাতালে। আর দৈনিক প্রায় ২০০ রোগী জরুরী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন।