
কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এসএসসি শেষ পরিক্ষা দিয়ে চিরকুট লিখে উধাও হয়ে যাওয়া দুই বান্ধবী দীর্ঘ একমাস পর উদ্ধার হয়েছে। বেশভূষা পাল্টে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি।
গতকাল কুমিল্লার চান্দিনায় একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধারের পর দুজনকেই চট্টগ্রাম নিয়ে আসে র্যাব-৭।
আরও খবর: সীতাকুণ্ডে ১৩ দিন যাবত রহস্যজনক নিখোঁজ দুই স্কুল বান্ধবী
গত ২৩ নভেম্বর উপজেলার কুমিরা মছজিদ্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি। উধাও হওয়া দুইজন হচ্ছে তামান্না আকতার (১৭) ও অর্পা মল্লিক(১৬)। দুইজনই কুমিরা লতিফা সিদ্দিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। দুই বান্ধবীর পালিয়ে যাওয়ার রহস্য যেন সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়। বেশভূষা পাল্টে পুরুষ সাজেন একজন, ঘর থেকে পালিয়ে কুমিল্লায় বাসা ভাড়া নেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে।

র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য তারা ঘর ছেড়েছিলেন। তারা দুইজন একে অপরকে ভালোবাসতো। এসম্পর্ক পরিবার মেনে নিবে না তাই তারা পালিয়ে যায়। তারা কুমিল্লা গিয়ে বাসা ভাড়া নেন। মাথার চুল কেটে, টুপি পাঞ্জাবি পরে পুরুষ সাজেন তামান্না। অর্পাকে স্ত্রী পরিচয় দেন। দুজন দুই ধর্মের হওয়ায় পরিবার বিয়ে মেনে নিচ্ছে না বলে গল্প ফাঁদেন বাড়িওয়ালার কাছে।
দুইজনের পালিয়ে যাওয়ার একমাস পরও উদ্ধার না হওয়ায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে কুমিল্লার ভাড়া বাসার মালিকের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বিষয়টি দুইজনের পরিবারকে অবহিত করলে পরিবার বিষয়টি র্যাব-৭ চট্টগ্রামকে জানালে তারা গিয়ে দুইজনকে উদ্ধার করে।
আরও খবর: সীতাকুণ্ডে নিখোঁজ দুই বান্ধবীকে কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব

তামান্নার স্বপ্ন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হওয়া এবং অর্পার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু পরিবার বাল্য বিয়ের উদ্যোগ নেয়ায় অর্পা, তামান্না ঘর ছাড়ে। তবে পুরো ঘটনাকে এক ধরনের ফ্যান্টাসি বলছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ। দুইজনকে ফিরে পেয়ে দুই পরিবারে নেমে আসে আনন্দের বন্যা।
এদিকে পালিয়ে যাওয়ার পর অর্পার মা অঞ্জনা মল্লিক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তামান্না আর অর্পা বান্ধবী, সে সুবাদে প্রতিদিনই তামান্না আমাদের ঘরে আসতো। তাদের দুইজনের মধ্যে আমি কিছুটা ঘনিষ্ট্য ভাবে মেলামেশা করতে দেখতাম, যেহেতু দুইজনই মেয়ে তাই প্রথম প্রথম কিছু মনে করতাম না। পরে তাদের আচরণ দেখে আমি তাদেরকে বকাও দিয়েছি কয়েকবার।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার এসআই ও অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা এমরান বলেছিলেন, তামান্না ও অর্পা নামে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থী পালিয়ে যাওয়ার পর দুই পরিবারের সাথে কথা বলে এবং অর্পার একটি ডায়েরি দেখে ধারণা করা হচ্ছে দুই বান্ধবী সমকামী। এছাড়া তাদের যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একে অপরকে লিখা দেখেও তা অনুমান করা হচ্ছে।