
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হওয়ায় ছয়দিন পর জেলার মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড়ের সাবেক ৬ বারের জনপ্রিয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম (৬৫) মৃত্যু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারী) রাত ৩ টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মীরসরাই থানায় আবুল কাশেমের স্ত্রী বিবি ফাতেমা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য বেলালকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।
পুলিশ অভিযুক্ত বেলালের ছেলে ফাহাদ, নজরুল ও সিরাজুল ইসলাম নামে তিনজনকে আটক করেছে।

এর আগে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) উপজেলার দক্ষিণ মঘাদিয়া ঘোনা এলাকার খালের কাদা মাটি থেকে আবুল কাশেমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর রাত ১০টায় ছুরিকাহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করানো হয়েছে। হাসাপাতালে ৩ বার অপারেশনের করেও শারীরিক কোন উন্নতি হয়নি। সেখানে রবিবার থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। পরে গতকাল সোমবার রাত ৩টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে মায়ানী ইউনিয়নে অবস্থিত আনন্দ বাজার যান সাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ৬ বারের সদস্য আবুল কাশেম। সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হয়। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে রাত ১০টার নাগাদ স্থানীয় মঘাদিয়া খালের পাশে কাদার মধ্যে ছুরিকাহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রথমে মীরসরাই উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে অবস্থার অবনতি হলে চমেক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়।
আহত সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের ছেলে বদরুদৌজা তারেক জানান, হাসপাতালে দীর্ঘদিন আমার বাবাকে নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করেছি। শুধু যেন বাবা বেঁচে থাকেন। হামলার পর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার মুখ থেকে কোন কথা শুনতে পাইনি। ৩ বার অপারেশন হয়েছে। তারপরও আমার বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে আমাদের এতিম করে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। তারেক আরো বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। শেষ বয়সে সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে চিরতরে শেষ করে দিয়েছে। আমি খুনী বেলাল সহ জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবী করছি।
আবুল কাশেমের স্ত্রী বিবি ফাতেমা অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী আবুল কাশেমের সাথে স্থানীয় শাহেরখালী ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেনের সাথে বিরোধ চলে আসছিলো। এর আগে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। আমাদের ধারণা এ ঘটনা বেলালের নির্দেশে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘কাশেম সাহেব গত নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষও ছিলো না। তার সাথে কোনকালে আমার কোন বিরোধ ছিলো না। হয়তো বা আমার কোন বিরোধীপক্ষ কাশেম সাহেবের পরিবারকে ভুল বুঝাচ্ছে।’
এদিকে সোমবার সকালে মীরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) মো. অলি উল্ল্যাহ বলেন, হামলার ঘটনায় সোমবার মীরসরাই থানায় একটি মামলা হয়েছে। আবুল কাশেম মারা যাওয়ায় তা এখন হত্যা মামলা হবে। ইতমধ্যে মামলায় অভিযুক্ত ৩জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় আজ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় আবুল কাশেমের লাশ চমেক হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ি আনার পর নিজ গ্রামে দাফন জানাযা শেষে দাফন করা হবে।