
চট্টগ্রাম রেলওয়ের কর্মচারী ও শ্রমিক দল নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহম্মেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি শিপন হাওলাদার ওরফে শিপন ও নাইমুল ইসলাম ওরফে মঈনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ফাঁসি কার্যকরের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জল্লাদ নাছির উদ্দিন ও সিরাজ মিয়া।
পাঠক ডট নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।
দণ্ডপ্রাপ্ত শিপন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার নন্দনসার গ্রামে। অপর আসামি নাইমুল ইসলাম ওরফে মঈন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার মৃত ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রতনপুর পূর্বপাড়া গ্রামে।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগারে এসে দণ্ডপ্রাপ্ত শিপনের সঙ্গে তার মা-ভাইসহ ৩ জন ও ইমনের সঙ্গে তার ভাই-বোনসহ ৩ জন প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন।
মঙ্গলবার দিনভর কনডেম সেলে দু’জনই নামাজ ও কোরআন শরীফ পড়ে সময় অতিবাহিত করেন।
মঙ্গলবার রাতে দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনের গোসল শেষে তওবা পাঠ করান কারা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ মো. জোনাইদ। পরে ছিল তাদের পছন্দের খাবার। এর আগে কারাবিধি অনুসারে বিকেল ৫টা এবং সর্বশেষ রাত ৯টার দিকে কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. রেজা মো. সরোয়ার আকবর দু’দফায় দুই জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তাদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান ডেপুটি জেলার আরিফুর রহমানসহ অন্য কারারক্ষীরা।
উভয়ের ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন, জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ, জেলার আসাদুর রহমান প্রমুখ।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ফাঁসি কার্যকরের পর ময়নাতদন্তসহ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, পরে তাদের মরদেহ কারাগারের ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য-২০০৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানার উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের বাসায় রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী শফিউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি স্থানীয় রেলওয়ের আমবাগান এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় বিভিন্ন কারণে চার দফায় রেলওয়ের জায়গা থেকে অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করে প্রশাসন। এসব ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসীরা তার সরকারি বাসায় ঢুকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে দুই ঘাতক শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চার জনকে খালাস দেন।