
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ডাকা আগামী ২৮ মার্চ দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের সমর্থনে চট্টগ্রামে বাম জোটের প্রচারণায় হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এতে বাম জোটের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে নেতারা।
আজ সোমবার (২১ মার্চ) রাত আটটার দিকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় হামলাকারীরা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে হরতালের সমর্থনে ব্যানার প্লেকার্ড ছিঁড়ে ফেলে তাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। ছাত্রলীগ কর্মীরা বাম জোটের নেতাকর্মীদের ট্রাক থেকে নামিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
হামলার প্রতিবাদে বামজোট মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকেল ৫টায় নগরের সিনেমা প্যালেস চত্বরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে।

ছাত্রলীগের হামলায় হলেন- বাসদ চট্টগ্রাম জেলায় ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, বাসদ নেতা আকরাম হোসেন, রায়হান উদ্দিন, সিপিবি জেলা নেতা মোস্তফা ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মিরাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রিতম বড়ুয়া, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এনি সেন, বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা জাহেদুন্নবী কনক।
বাসদ নেতা আল কাদেরী জয় বলেন, ‘পূর্ব ঘোষিত দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ২৮ মার্চ অর্ধদিবস হরতালের সমর্থনে সোমবার বিকেল থেকে প্রচারণা নামি আমরা। নগরের ১৫টি পয়েন্টে পথসভা ছিল। ১৪টি সভা নগরের সিনেমা পেলেস, চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, দুই নম্বর গেইট হয়ে জিইসি গেলে কামাল স্টোরের সামনে এসে পথসভায় ছাত্রলীগ পরিচয়ে লাঠিসোটা নিয়ে একদল লোক আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা সরকার বিরোধী কোনো স্লোগান দেয়া যাবে না বলে জানায়। আমরা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও সিন্ডিকেট বিরোধী স্লোগান দিয়েছি। জনগণকে হরতাল পালনের আহবান জানাচ্ছিলাম। মহানগরের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে আমরা তাদের কয়েকজনকে চিনি, তারা ওই এলাকার এমইএস কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।’
হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, হামলার সময় ১৫/১৬ জন যুবক( এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ) ট্রাকটাকে ঘিরে ফেলে।তারপর ড্রাইভার থেকে চাবি নিয়ে নিচে থেকেই গালাগাল শুরু করে। পাশে বসা আকরাম ভাইকে ঘুষি মারে।ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, মাইক ভাঙতে থাকে কয়েকজন। তারমধ্যেই বাঁশ, লাঠিসোটা আর প্ল্যার্কাড নিয়ে মারতে থাকে। রায়হান, মিরাজ, ঋজু, প্রীতম, এনি, দেবুসহ অনেকের শরীরের উপর হামলা করে। নুরুচ্ছফা ভাইকে টেনে নামায়। আমার উপরেও এই সন্ত্রাসীরা হামলে পড়ে। এরপর বলতে থাকে, ‘সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে আমরা সহ্য করবো না’ সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান হবে না!” এইগুলো হচ্ছে সভ্য ভাষা যা লেখা যায়, বাকিগুলো ছাত্রলীগের মুখেই মানায়, ভদ্রলোকদের নয়। হামলার সময় তারা চেয়েছিলো ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে নিতে। কিন্তু রাস্তায় শতশত মানুষের ভীড় এবং আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তারা হামলাকারীরা আর ঠিকতে পারে না, পরে ড্রাইভারকে চড়থাপ্পড় দিয়ে চাবি দিয়ে দেয়। এরপর ট্রাক নিয়ে আমরা আবার চলে আসি সিনেমা প্যালেস।
এই হামলায় প্রমাণ করে- এই সরকার জনগণের নয়, মাফিয়াদের সরকার। মূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী তোষণ আর নিজ দলের ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী নিয়েই ক্ষমতায় থাকার দল।তাই জনগণের স্বার্থ, সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো কিছুই তাদের দরকার নেই, যেমন ছিলো না পাকিস্তান, আয়ুব ইয়াহিয়াদের। এই ফ্যাসীবাদী, ভোট ডাকাতির সরকারের কাছে দেশ নিরাপদ নয়, জনগণ নিরাপদ নয়।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জিইসি মোড়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এমইএস কলেজে তো ছাত্রলীগের হাজার হাজার কর্মী, অন্য কেউ হামলা করলেও আমরা খবর পেতাম। তবে শুনেছি ওই এলাকায় অযৌক্তিক স্লোগান দেয়ায় পুলিশের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়েছে।’
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান বলেন, কোনো সমাবেশে হামলার কথা তারা জানেন না। জিইসি এলাকায় ‘কিছু লোক’ সমাবেশ করেছে। তারা আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ করেনি।