
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে সারাদেশ ব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে স্বারক লিপি প্রদান করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন ও আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসককে স্বারকলিপি দিতে গেলে তাঁর অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী বেগম স্বারকলিপি গ্রহণ করেন।
এসময় বিএনপি নেতৃবৃন্দ চাল ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং নিত্য পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানান। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী বেগম এ বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহন করার আশ্বাস দেন।
স্বারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ইস্কান্দার মির্জা, আহবায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জিয়া, মাহবুব আলম, এড. মফিজুল হক ভূঁইয়া, নাজিম উদ্দীন আহমেদ, আবুল হাসেম, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মনজুর আলম চৌধুরী মনজু, কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি মন্জুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাকির হোসেন, আকবর শাহ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাঈনুউদ্দীন চৌধুরী মাঈনু, মহানগর বিএনপি নেতা আবদুল হালিম স্বপন, মো. ইদ্রিস আলী, দিদারুল আলম, নকিব উদ্দীন ভূঁইয়া, ইউসুফ শিকদার, হাজী নুরুল হক প্রমূখ।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাজারে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, মরিচ, গুঁড়ো দুধ, শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে অসহায় ক্রেতা। মোটা চাল এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিকন চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ভোজ্য তেল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, মসুর ডাল ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা, গুঁড়ো দুধ ৫৯০ থেকে ৬৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ টাকার নিচে নামে না। সবজি সহ প্রত্যেকটি জিনিস এই ভরা মৌসুমে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্যামিতিক হারে দাম বৃদ্ধি সরকারের গণবিরোধী নীতির বর্ধিত প্রকাশ। হরিলুট, টাকা পাচার সহ সীমাহীন দূর্নীতির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি করে দফায় দফায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও পানির দাম বৃদ্ধি করেছে আওয়ামী সরকার। এই বৃদ্ধির ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ হিসেবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হু হু করে বাড়ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১০ বছরে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৯০ শতাংশ, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪৪ শতাংশ, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৮২ শতাংশ, পানির দাম বেড়েছে ২৬৪ শতাংশ। এই দাম বৃদ্ধি নজিরবিহীন ও অস্বাভাবিক। জনগণের নির্বাচিত সরকার থাকলে এই ধরনের সীমাহীন দাম বৃদ্ধি পেতো না। জবাবদিহিতা নেই বলেই দাম বৃদ্ধির পেছনে অনৈতিক সিন্ডিকেট কাজ করছে। ক্ষুধা ও অনাহারে ক্লিষ্ট জনগণের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। যেন সরকারের কোন দায় নেই। সারাদেশে দুর্ভিক্ষের ছায়া প্রতিদিনই বিস্তৃত হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়া সহ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এমনিতেই কর্মসংস্থান নেই, তার উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। মধ্যম ও নিন্ম আয়ের মানুষকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। অভাবের তাড়নায় মা সন্তান বিক্রি করছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা করছে। চৈত্রের তীব্র রোধের মধ্যে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবি থেকে তুলনামূলক কম মূল্যে নিত্যপণ্য কেনার জন্য ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ে বোঝা যায়- বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম থাকায় দুই /তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় বিক্রি এবং তারপরে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা খালি হাতে ফিরে যান।
নেতৃবৃন্দ ক্ষুধা, অনাহার, অর্ধাহারে বিপন্ন দেশের মানুষকে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে আহ্বান জানান।