বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই ইতিহাস বিকৃতি করেছে। তারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের নাম মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চায়
তিনি আজ রবিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই বীর চট্টলা থেকে বীরপুরুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর আমরা পার করেছি। এই ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মুছতে পারেনি। কারণ জিয়াউর রহমান আমাদের হৃদয়ে আছেন, এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধে যার যা অবদান, প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করতে হবে, লাখো শহীদের কথাও স্বীকার করতে হবে যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। স্বীকার করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি দুই সন্তান নিয়ে এই চট্টগ্রামে ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। তাঁকে রেখে জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বেরিয়ে যান এবং পরদিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। আমরা যখন এসব কথা বলি তখন আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অনতিবিলম্বে জনগণের ভোটের অধিকার দিতে হবে।অন্যথায় চট্টগ্রাম থেকেই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকার পতনের দুর্বার অন্দোলন শুরু করতে হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর, জেলা দক্ষিণ জেলা ছাড়াও আসে পাশের জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি কক্সবাজার ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বাস ট্রাক যোগে সমাবেশস্থলে আসতে থাকে নেতাকর্মীরা।
বিএনপির এ সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পলোগ্রাউন্ড এলাকা এবং আগে পাশের কদমতলী পোস্তার পাড়, টাইগার পাস এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করছে। এক ব্যক্তিকেই মুক্তিযুদ্ধের সব বানাচ্ছে, যে ব্যক্তি তখন দেশেই ছিলেন না। দেশে ছিলেন জিয়াউর রহমান। এই আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। এখন বলছে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান ? যে সংবিধান তারা নিজেদের ইচ্ছামতো করে কাটাছেড়া করে নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। পরিস্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে বলছি, সময় শেষ, যতই ডিগবাজি খান, কোনো লাভ হবে না।
এসময় পুলিশকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এখন আর কার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে তা দেখার বিষয়। তাদের নির্দেশে গুম খুন হয়েছে। এখন জনগণের নিষেধাজ্ঞা আপনাদের ওপর আসবে। এই নিষেধাজ্ঞা লজ্জার।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সরকার হঠাৎ ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিল। মার্কিন মন্ত্রী এসে ধমক দিল আর অমনি সরকার ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়ে দিল। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই। জনগণের প্রতি ভালোবাসা নেই। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে শুধু। আর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে। এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। খুন-গুমের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা লজ্জার, দেশের জন্য লজ্জার, জাতির জন্য লজ্জার। অথচ আওয়ামী লীগের নির্দেশে খুন-গুমের ঘটনা ঘটেছে। তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সব রাজনৈতিক, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এই চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল। আসুন, আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার।
বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর,সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক এড, বদরুল আনোয়ার, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দীন আলাল, লক্ষীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দিপেন তালুকদার, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহম্মেদ খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন, বান্দরবন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা প্রমূখ।