ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

চট্টগ্রামে আজ ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আসর

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

চট্টগ্রাম আজ (২৫এপ্রিল) সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা (কুস্তি প্রতিযোগিতা)। এ উপলক্ষে চলছে ৩ দিনের বৈশাখী মেলা।

বিকেলে শহরের লালদীঘির জেলা পরিষদ মার্কেট প্রাঙ্গণের সড়কের উপর বিশেষ ব্যবস্থায় এ বলিখেলা অনুষ্ঠিত হবে। করোনার মহামারির কারণে দুই বছর এ আয়োজন বন্ধ থাকার পর ঐতিহ্যবাহী এ বলিখেলা ও মেলার এবার বসছে ১১৩তম আসর। প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন চট্টগ্রাম কক্সবাজার, নোয়াখালী কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক বলি।

.

এদিকে আজকের বলিখেলা ও গতকাল রবিবার থেকে শুরু ৩ দিনের বৈশাখী মেলার কারণে কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে লালদীঘি, কে সি দে রোড, বক্সিরহাট, সিনেমা প্যালেস, আমানত শাহ রোড, খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জগামী রোড সহ কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিএমপির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাগানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।

তিন দিনব্যাপী এ মেলা আজ এবং আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের গৃহস্থালি ও লোকজ পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। মাটির তৈরি তৈজসপত্র, মাটির টেপা পুতুল, কাঁচের চুড়ি, পাটপণ্যের পাশাপাশি কাঠের পুতুল, খেলনা, বাঁশ-বেতের জিনসিপত্র আর মুড়ি-মুড়কি বাতাসার দোকানের ভিড় লেগেছে।

.

বৈশাখের তপ্ত দুপুরে মাথার ওপর প্রচণ্ড তাপদাহ। তারই মাঝে বাহারি গ্রামীণ পণ্যের পসরায় সেজেছে লালদিঘী মাঠের আশে পাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। মেলায় এসেছে নানান বয়সী মানুষ।

ঢাকার শনির আখড়া থেকে লায়লা এসেছেন হরেক রকমের চুড়ি পসরা সাজিয়ে। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২শ’ টাকা পর্যন্ত চুড়ির সমাহার সাজিয়েছেন এই বিক্রেতা। কেমন চলছে বেচাবিক্রি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছোট বড় সব বয়সীদের চুড়ি আছে আমার কাছে। রেশমি চুড়ি, কাঁচের চুড়ি থেকে শুরু করে সব রকমের চুড়ি আছে।

.

এদিকে এবছর মেলা হবে কি হবে না এ দোলাচলে অনেক ব্যবসায়ী মেলায় অংশ নিতে পারেননি বলে মন্তব্য ঢাকার নরসিংদী থেকে আসা গৃহস্থালি পণ্যের ব্যবসায়ী রফিকুলের। তিনি বলেন, ‘দুই বছর পর মেলাটা হচ্ছে। প্রথমদিকে খুব আশাহত হয়েছিলাম যে মেলা হবে না। এরপর যখন বললো মেলা হবে তখন আবার হঠাৎ করে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হয়েছে। যে কারণে দূরদুরান্ত থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসতে পারেনি।

কুমিল্লা থেকে আরেক বিক্রেতা হারুন মেলায় এসেছেন বাঁশি নিয়ে। ১০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দামের বাঁশির পসরা সাজিয়েছেন এ দোকানি। তিনি বলেন, ‘বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের আগ্রহ বাঁশি নিয়ে। সবাই যে যার পছন্দ অনুযায়ী বাঁশি কিনছেন। শুরুতে লোকজন কম হচ্ছে। বিকেলে পর আরও মানুষ বাড়বে। তখন আশা করা যায় বিক্রি ভালো হবে।’

.

মেলায় আসা একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌটুশি বনিক বলেন, ‘প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি বৈশাখী মেলা কখন হবে। গত দুই বছর মেলা হয়নি। আর মাটির জিনিসের প্রতি আগ্রহটা খুব বেশি। তবে অন্য জিনিসের তুলনায় মাটির জিনিসের দামটা একটু বেশি। আমি এই ছোট্ট একটা জিনিস কিনলাম এটার দাম ৩শ’ টাকা। তবে বেশি হলেও কিনতে পেরে ভালো লাগছে। কিছু কেনাকাটার চাইতে মেলায় ঘুরতে ভালো লাগে তাই ইফতারের পর দেখি আবার আসবো।’

আবদুল জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে এক হাজার ব্যবসায়ী এই মেলায় এসেছেন। আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছি। সবাইকে বলবো যেন নির্বিঘ্নে মেলায় আসে। নতুন প্রজন্ম যাতে জব্বারের বলীখেলার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। যদিও এবার অস্থায়ীভাবে আমরা বলীখেলার আয়োজন করেছি; তাই সাময়িক সমস্যা হবে। তবে তাও আমরা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। মেলা চলবে আগামীকাল পর্যন্ত।

.

বলী খেলাকে কেন্দ্র করে নগরীতে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়িয়ে জনগণের নিরাপত্তার ছক কষছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ, ডিবি, সোয়াট টিমের সদস্যরাও সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।

সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন বলেন, মেলার নিরাপত্তা জোরদার করতে কোতোয়ালী থানার পক্ষ থেকে চারটি চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। নিউ মার্কেট থেকে বলী খেলার মাঠ পর্যন্ত একটি, লাভ লেইনে একটি ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের দুই পাশে দুইটা চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। তাছাড়া লালদীঘির বলী খেলায় ৩০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে বলী খেলার আশেপাশের অলিগলিতে সব রকমের আড্ডাও নিষেধ করেছে সিএমপি প্রশাসন।

.

প্রসঙ্গত, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার সূচনা করেছিলেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার আয়োজন করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আব্দুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন। ১৯০৯ সাল থেকে (১৩১৬ বাংলা ১২ বৈশাখ) ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১০তম আসর পর্যন্ত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। করোনার কারণে পরপর দুই বছর বলীখেলা ও মেলা স্থগিত করা হয়। এবার বলীখেলা ও মেলার ১১৩তম আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print