
স্বরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে জেলার সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বেসরকারী একটি কন্টেইনার ডিপুতে। শনিবার (৩ জুন) দিবাগত রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে রাসায়নিক পণ্যের কন্টেইনার বিস্ফোরণে অন্তত ২৪ জন নিহত এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ কারখানাটির দুই শাতাধিক শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে পাঁচ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। কুমিরা ফায়ার স্টেশনের নার্সিং অ্যান্টেনডেন্টস মনিরুজ্জামান (৩২), মমিনুল হকের (২৪) বাড়ি বাঁশাখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামে। তিনি ফরিদুল আলমের ছেলে। অন্যজন একই উপজেলার পূর্ব চারিয়ার নাপোড়া এলাকার মাহমুদুর রহমানের ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২৪), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬), রবিউল আলম (১৯), বাঁশাখালীর চনপাড়ার এলাকার আবব্দুল মজিদের ছেলে। এর মধ্যে মহিউদ্দীন বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আরো খবর: সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহতের আশঙ্কা
ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের চতুর দিকের অন্তত ৪/৫ কিলোমিটার এলাকা বিকট শব্দে প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠে। এতে ঘর বাড়ি মসজিদ ও বিভিন্ন অফিস দোকান পাটের কাঁচের দরজা জানালা ভেঙ্গে পড়ে, ফাটল ধরেছে পাকা দেয়ালে। পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানাগেছে, রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে সোনাইছড়ির কেশবপুরে অবস্থিত বিএম (প্রাইভেট) কন্টেইনার ডিপুতে (সাবেক কাসেম জুট মিলস) আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নগরীর বিভিন্ন ফায়ার স্টেশন ও সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে অন্তত ৮টি গাড়ি আগুন নির্বাপণের কাজ করার সময় রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সেখানে কর্মরত কয়েকশ শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা আহত হয়ে ঝলসে যায়। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরপরই আগুনের পরিধি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে অন্যান্য কন্টেইনার।
আগুন নেভাতে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের টিম কাজ করার সময় একের পর এক কন্টেইনার বিস্ফোরিত হয়।
আরও খবর: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে ৪ জনের মুত্যু ও শতাধিক অগ্নিদগ্ধ
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, কন্টেইনারগুলোতে ক্যামিকেল ভর্তি ছিল। যার কারণে আগুন লাগার পর সেগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এদিকে ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। সেগুলো আহতের নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন বেসকারী হাসপাতালে।
রাতে ঘটনাস্থল থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের পর পরই আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। বিস্ফোরণে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও সময় লাগবে।
এদিকে রাত ১০টায় লাগা আগুন ভোর ৬টা পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে ৮টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট কাজ করলেও পরে ২৪টি ইউনিট এক যোগে আগুন নির্বাপণে কাজ করেও আগুন নিয়েন্ত্রণে আসতে হিমশিম খায়।

আগ্রাবাদস্থ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ডিপোতে প্রায় দেড়শো কন্টেইনার আছে। কিন্তু রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে কন্টেইনার। যে কারণে আগুনের কাছেও ঘেঁষতে পারছি না আমরা। প্রায় ১০০ গজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’
পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সময় দায়িত্বে থাকা সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া অন্তত ৯ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।এর মধ্যে একজন পরিদর্শক, ১ জন এএসআই, ৭ জন কনস্টেবল।

ভয়াবহ বিস্ফোণে ক্ষতিগ্রস্থ বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের এমডি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
রাতে এক বিবৃতিতে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, কি কারনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারনা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হতাহতদের পাশে থাকব আমরা। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরন দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সবাই পাশে থাকুন।
