
লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা। দেশে প্রথম বারের মত শুরু হওয়া আঞ্চলিক পর্যায়ের ৩ দিনের এ ইজতেমায় (ধর্মীয় মহাসমাবেশ) শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে জুমার নামাজে অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ লোক সমাগমন ঘটেছে বলে দাবী করেন আয়োজনকারী সংগঠনের নেতারা।
ঢাকার টংগীর বিশ্ব ইজতেমায় স্থান সংকোলন না হওয়ায় বিশ্ব ইজতেমা কমিটির আঞ্চলিক বিশ্ব ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাটহাজারী উপজেলায় বৃস্পতিবার থেকে তিন দিন ব্যাপী চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। শুক্রবার ফজর নামাজের পরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

সকাল থেকে বিভিন্ন বক্তার বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর
মুসল্লিদের মধ্যে কেউ বিশাল শামিয়ানার ভেতর বসে বয়ান শুনছেন, আবার কেউ জিকিরে মুশগুল আছেন। তার মধ্যে অনেকে মাঠের পাশে দুপুরের ব্যস্ত। সব কাজ চলছে অত্যান্ত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে।

ইজতেমায় ৩ দিনের জন্য জেলার সাতকানিয়া থেকে আসা বৃদ্ধ জেবল হোসেন বলেন, আর বেশীদিন বাঁচবো না। এ বয়সে বিশাল এ ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে পেরে মনে শান্তি পাচ্ছি। রাতের বেলায় শীতে কিছু কষ্ট হলেও লাখ লাখ মানুষের সাথে বয়ান শুনে সময় পার করেছি।
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত আয়োজন এ ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা ছাড়াও ভারত, চীন, কাতার, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্দান, মিশর, কুয়েত ও দুবাই সহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক বিদেশি মেহমানও ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানান বিশ্ব ইজতেমা কমিটির সদস্যরা।

আগামীকাল শনিবার সকালে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
দেখা গেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার থেকে মুসল্লিরা শুকনো খাবার, বিছানাপত্রসহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ইজতেমায় আসা আসছে।
ইজতেমা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা মুফতি জসিম জানান, আজ ফজরের নামাজের পর পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মাওলানা রিজোয়ান আমবয়ান শুরু করেন। এর পর মুফতি শাহেদ ওই মাওলানার উর্দুতে আমবয়ান বাংলাতে তরজমা করেছেন। আর এ বয়ান ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে এরপর শুরু হয় মুসল্লিদের মধ্যে তালিম। এ সময় প্রতিটি গ্রুপে ১০-২৫ জন করে তালিমে অংশ নেন। এভাবে জুমা, আছর, মাগরিব ও এশার নাজের পর তাবলিগ জামাতের মুরিব্বরা বয়ান করেন। আগামীকাল আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত বিশিষ্ট আলেম ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বিরা ইমান, আমল, আখলাক, ইহকাল ও পরকালসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করেন।

এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা জন্য স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছে।
অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, ইজতেমার নিরাপত্তায় পাচঁ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ধরণের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আশাকরি শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হবে এ ইজতেমা।