
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটি।
এতে বলা হয়েছে, বিএম ডিপোতে যে কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাখা ছিল তাতে ইউএন (জাতিসংঘ) সনদ ছিল না। এবং ডিপোতে থাকা কন্টেইনারভর্তি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের কারণ উল্লেখ করে এর জন্য মালিক ও তদারকি সংস্থাগুলো দায়ী করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার এক মাস দুই দিন পর গতকাল বুধবার বিকেলে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের হাতে সীলগালা করা খামে এ প্রতিবেদন তুলে দেন কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান। এসময় কমিটির ১৩ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
১৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ২৫৯টি সংযুক্তিপত্র সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও গঠিত তদন্ত কমিটি সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের জন্য ডিপো মালিক ও সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে দায়ী করেছে।
প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট ২০দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রায় ২৬টি কন্টেইনারের মধ্য থেকে কয়েকটি ৪০দিন ধরে ডিপোতে পড়েছিল। এসব কন্টেইনার রপ্তানির জন্য স্টাফিং করার পরও ৪ দফা শিপমেন্ট পিছিয়েছিল শিপিং এজেন্ট। দুর্ঘটনার জন্য হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কন্টেইনার ভর্তির পর দীর্ঘদিন রেখে দেওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট ২০দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার জন্য হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কন্টেইনার ভর্তির পর দীর্ঘদিন রেখে দেওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ২৬টি কন্টেইনারের মধ্য থেকে কয়েকটি ৪০দিন ধরে ডিপোতে পড়েছিল। এসব কন্টেইনার রপ্তানির জন্য স্টাফিং করার পরও ৪ দফা শিপমেন্ট পিছিয়েছিল শিপিং এজেন্ট।
তিনি আরও বলেন, তিনটি বিষয় বিবেচনায় রেখে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করনীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন।
‘পুরো তদন্তে ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এর মধ্যে সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী বিএম ডিপোর পাঁচজন কর্মকর্তা, কর্মচারীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিএম ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিচালক মুজিবুর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিপো অপারেশনে সরাসরি জড়িত বিএম ডিপোর ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন।’
দুর্ঘটনায় বিস্ফোরিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আল রাজি কেমিক্যালের কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে তিনি জানান।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, প্রতিবেদন তৈরিতে বন্দর, কাস্টমস, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন নেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন কেমিক্যালের ১৭টি নমুনা সিআইডি ঢাকা, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদনও তদন্ত প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্তে দেওয়া ২০টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে- ১৯৯৫ সালের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (অফডক) নীতিমালা সংশোধন করে হালনাগাদ করার সুপারিশ করা হয়। এর একটি ডিপো পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি ২৫টি সংস্থার লাইসেন্স কিংবা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। সংশোধিত নীতিমালায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানে রাখার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে ডিপো কর্তৃপক্ষের যেমন গাফিলতি রয়েছে, তেমনি মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারি দপ্তরগুলোরও অবহেলা ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এসময় বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, গত ৪ জুন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছে। ওই দুর্ঘটনার পরের দিন ৫ জুন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন। এ প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকে পরবর্তীসময়ে যে নির্দেশনা আসবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।