
২০১৮ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’, যা আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হবে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নে দেশের ৪টি বিভাগের উপকূলীয় ১৬টি জেলার ৭৫টি উপজেলা এবং ৭৫০টি ইউনিয়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৫ বছরে এই প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১ হাজার ৮৬৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো মৎস্য জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে সামুদ্রিক প্রজাতির মৎস্যের মজুদ নিরূপণ করা, বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে মৎস্য মজুদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদের অধিকতর কার্যকর পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি (এমসিএস) পদ্ধতির বাস্তবায়ন, উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্যবাজার উন্নতকরণ, বাগদা চিংড়ির উৎপাদনশীলতা ও রপ্তানি বৃদ্ধি করা, দরিদ্র মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকায়নে সহায়তা করা এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
কিন্তু ২০২০ সালে দেশব্যাপি কোভিড ১৯ সংক্রমণের ফলে অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় মৎস্য সেক্টরও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। দেশব্যাপী পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ফলে মৎস্য চাষে ব্যবহৃত পোনা, মৎস্যখাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও মৎস্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়।
বাজারজাতকৃত মৎস্যের দাম কমে যাওয়ায় মৎস্য সেক্টর তথা মৎস্য সেক্টরের সাথে জড়িত সকল চাষি, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জনগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এরই প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় মৎস্য অধিদপ্তরও ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য সেক্টরের জন্য ১০০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা প্রদান করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে ৫টি উপজেলা থেকে কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খাতের ৭৮ হাজার ৭৪ জনকে ৭টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন হারে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই না করে খুব তাড়াহুড়ো করেই এই প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপরোক্ত প্রণোদনার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের সত্যতাও মিলেছে।
মৎস্যচাষীরা জানিয়েছেন, মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদানকৃত প্রণোদনার আর্থিক সহায়তা গ্রহণের জন্য প্রনোদনা পাওয়ার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে নানা আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সেটার পরিমান ছিলো প্রণোদনায় গৃহীত টাকার অর্ধেক।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রণোদনার তালিকা প্রণয়নে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। অথচ প্রনোদনার সুবিধা ছড়িয়ে দিতে সরকারের নির্দেশনা ছিল জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা। তাই সংশ্লিষ্টদের দাবী, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সরকারের প্রনোদনার সুবিধা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে পৌঁছানোর।