ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান আর নেই

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

দৈনিক জনকণ্ঠের সাবেক সম্পাদক, দৈনিক বাংলার সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

বার্ধক্যজনিত জটিলতায় অসুস্থ হলে তোয়াব খানকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কর্মজীবন:
দীর্ঘ প্রায় সাত দশক সময়ের সাংবাদিকতা জীবনের এক লড়াকু সৈনিকের নাম তোয়াব খান। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় ছিলেন তিনি। সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাংবাদিক তোয়াব খান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। সুশৃঙ্খল, নির্মোহ, সময়ের নিরিখে যথার্থ অগ্রসরমান, উদার, মুক্তচিন্তার অধিকারী তোয়াব খান জীবনের শেষ দিনগুলোতেও তারুণ্যের শক্তি নিয়েই পেশাগত জীবনে ছুটে চলছেন অবিশ্রান্ত গতিতে। বৈচিত্র্যে ভরপুর তার সাংবাদিকতা জীবন।

তোয়াব খান শিশু বয়সেই দেখেছেন পঞ্চাশের মন্বন্তর, ব্রিটিশ শাসনের উগ্রতা, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার মন্ত্রে জেগে ওঠার প্রয়াস, দেখেছেন পাকিস্তান সরকারের শাসন-শোষনের রোষানল, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পতন ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়, বঙ্গবন্ধুর ৬-দফার দাবিতে জেগে ওঠা স্বদেশ, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। প্রতিটি ঘটনার ভেতর দিয়ে শানিত হয়েছে তার চেতনা, পেশা।

সাংবাদিক তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে। পিতা আবদুল ওহাব খান পেশাগত জীবনে ছিলেন চিকিৎসক। তার মায়ের নাম জোবেদা খানম। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।

তাদের বাড়িটি ছিল স্বদেশী আন্দোলনের একটি কেন্দ্রের মতো। পরিবারের অনেকেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মওলানা আকরম খাঁ। সাতক্ষীরার শতাব্দীপ্রাচীন প্রাণনাথ হাইস্কুলে (পিএন) তার শিক্ষা জীবনের শুরু। এই স্কুল থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর পড়াশোনা করেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সমকালীন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন। তবে ১৯৫৫ সালে প্রগতিশীল পত্রিকা সংবাদে সাব-এডিটর হিসেবে যোগদানের মধ্যদিয়ে তার সাংবাদিকতার পেশাগত জীবন শুরু। পত্রিকাটি ছিল তৎকালীন বামপন্থী নেতাকর্মীদের মত প্রকাশের একটি অভয়স্থল।

মনিসিংহ, খোকা রায়, নেপাল নাগ, বারীন দত্ত, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সার, আলতাফ আলী এদের মতো নেতা ও সাংবাদিকদের সান্নিধ্য তোয়াব খানের জীবন ও চিন্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি নিজেই বলেছেন,‘এভাবেই অজান্তে হয়ে গেছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দীক্ষা— বদলে গেছে জীবনের গতিপথও। এভাবেই অনেকটা ঘোরের মধ্যে চলে যাওয়া। তাতে ক্রমেই শিকেয় উঠেছে পড়াশোনা।’

১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৪ সালেই তিনি তৎকালীন ন্যাশনাল প্রেস ট্রাস্ট পরিচালিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় যোগ দেন চিফ সাব-এডিটর হিসেবে।

১৯৬৫ সালে তিনি দৈনিক পাকিস্তানের বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক পাকিস্তানের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে, কাজ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার লেখা ও পাঠ করা ‘পিন্ডির প্রলাপ’ মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের প্রতিটি বাঙালিকে প্রেরণা যোগাত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি যোগ দেন দৈনিক বাংলায় (স্বাধীনতার পর “দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়) ১৯৭২ সালে এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে ট্রটি পরিচালিত এই পত্রিকাটি জনপ্রিয়তার শীর্যে ওঠে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও মহাপরিচালক ছিলেন ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের প্রেস সচিব ছিলেন।

১৯৯২ সালে দৈনিক বাংলায় আবারো সম্পাদক পদে যোগ দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার মৌলিক নীতির প্রশ্নে আপস করতে না পারায় ১৯৯৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার তাকে সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করে। ওই বছরই তিনি যোগ দেন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক পদে। প্রায় তিন দশক পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনেকটা অভিমানের বশবর্তী হয়েই তিনি জনকণ্ঠ থেকে অব্যাহতি নেন। ওই বছর অক্টোবর মাসে তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তার বয়স ৮৮ পেরিয়ে গেছে; কিন্তু এ সত্ত্বেও তিনি প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে অফিসে যেতেন।

ব্যক্তিগত জীবন:

১৯৬২ সালে তোয়াব খান বিয়ে করেন। স্ত্রী হাজেরা খান। দুই কন্যার জনক তিনি। এর মধ্যে এক কন্যা এষা খান মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর। অপর কন্যা তানিয়া খান আমেরিকার ভার্জেনিয়াতে থাকেন। পেশায় শিক্ষক। তোয়াব খান বাংলা একাডেমি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য। তার উল্লেখযেগ্য কলাম : ‘সত্যমিথ্যা, মিথ্যাসত্য’। তার প্রকাশিত একমাত্র গ্রন্থটির নাম ‘আজ এবং ফিরে দেখা কাল’। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print