মন্দিরের জায়গা দাবি করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকায় নিরীহ একটি পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল করে নিয়েছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। এ সময় বাধা দিতে গেলে দখলদাররা জায়গার মালিক স্থানীয় দোকানদার বাবুল রাহা ও তার পরিবারের উপর হামলা চালায়। দোকানপাট ভাঙচুর করে।
এ ব্যাপারে থানা পুলিশ, মামলা মোকাদ্দামা করেও প্রতিকার পাচ্ছে না অসহায় হিন্দু পরিবারটি।
বর্তমানে বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধামকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাবুল রাহার পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে হামলা ও জবর দখলের ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। তবে পুলিশ একটি জিডি নিয়ে দায় সারে। পরে এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করে ভুক্তভোগিরা।

বাবুল রাহার স্ত্রী সরস্বতী রাহা অভিযোগ করেন চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের দিলীপ মেম্বারের বাড়ীর আমাদের প্রতিবেশী মৃত দিলীপ রাহার ছেলে স্বপন রাহা ও মৃত বিমল চন্দ্র বণিকের ছেলে যিশু বণিক (নিউ মার্কেট বসুন্ধরা জুয়েলার্সের মালিক) দীর্ঘদিন যাবৎ পূর্ব শত্রুুতার জের ধরে আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি গ্রাস করার চেষ্টা চালিয়েছে আসছে। শশুরের সম্পত্তিতে মগদ্বেশ্বরীর নামে একটি মন্দির রয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর-২২ ইং দুপুরে আসামিরা সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে মন্দিরের এস এস গেট ভাঙচুর করে। আমার স্বামী এবং আমি প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা অকথ্য ভাষায় আমাদেরকে গালাগালি করে হুমকি-ধামকি প্রদান করে জায়গাটি দখল করার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

হাটহাজারী থানায় জিডি করলে থানা থেকে এসআই সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পুলিশ এসে ভাঙচুর করার সত্যতা পেয়ে উভয়পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সাথে সাথে স্বপন রাহা ও যিশু বণিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেআইনিভাবে আমাদের জায়গায় প্রবেশ করে আমার স্বামীর দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাত করে মালামাল ও টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা আমি এবং আমার স্বামীর উপর রড হকিস্টিক নিয়ে মারধর করে মারাত্মক জখম করে। আমাকে হত্যার চেষ্টা শ্বাসরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রসল করে কাপড় চোপড় ছিঁড়ে ফেলে।
সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আমাদের আহত করার পর দোকানের মালামাল লুটপাট টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মাননীয় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৬ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে।
সরস্বতী রাহার স্বামী বাবুল রাহা জানান,আমাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে বর্তমানে ভোগ দখল করে আসছি। আমাদের ১৭ শতক সম্পত্তির উপর তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তাদের কাছে কম দামে জায়গা বিক্রি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্বপন রাহা গং আমাদের উপর হামলা ভাঙচুর লুটপাট চালিয়ে আমাদের জায়গা দখল করে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা হলে আদালত তাদের স্থাপনা নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
হামলার সময় ঘটনাস্থলে যাওয়া হাটহাজারী থানার এস আই সিদ্দিক পাঠক ডট নিউজকে বলেন, মন্দিরের নাম দিয়ে জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এসময় দুই পক্ষ তাদের জায়গা দাবী করে। স্বপন রাহা ও বাবুল রাহা তারা চাচাতো জেঠাতো ভাই।
জায়গার বিরোধ যেহেতু আমরা সমাধান করতে পারি না। সেহেতু তাদের উভয় পক্ষকে দখল বেদখল থেকে বিরত থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে বৈঠকে বসার কথা বলে আমরা চলে আসি। তারা দুপক্ষ মেনে নেয় বৈঠকে সমাধানের কথা। কিন্তু আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই স্বপন রাহার লোকজন বাবুল রাহার ও তার পক্ষের লোকজনের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ খবর পেয়ে আমি আবার পুলিশ নিয়ে গিয়ে তাদের বিরত রাখার চেষ্টা করি। তাদের বলি অন্তত তাদের দোকান এবং দোকানের মালামাল ও ফ্রিজের যেন ক্ষতি না করে। কিন্তু যিশু রাহা ও স্বপন রাহার লোকজন মন্দিরের জায়গার কথা বলে হামলা ও ভাঙচুর করে। আমি অনেক চেষ্টা করেও তাদের বিরত রাখতে পারিনি। কারণ মন্দিরের বিষয়টি সেনসেটিভ। আমি যদি পুলিশ দিয়ে বল প্রয়োগ করতাম তাহলে তারা মন্দিরে অজুহাত দেখিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করতো। তাই শত চেষ্টা করেও আমি বাবুল রাহার পক্ষে কিছুই করতে পারিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যিশু বণিক বলেন, কোন ধরণের লুটপাট বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। মূল ঘটনা হচ্ছে বাবুল রাহা স্থানীয় উত্তম নামে এক সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় তার জায়গার সাথে মন্দিরের কিছু জায়গা দখলে নিয়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্ম মাদক সেবন মাদক বিক্রি করে আসছিল। এ নিয়ে পুজার্থী ও এলাকবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আমি মন্দিরের দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে এসববে প্রতিবাদ করছি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উভয়পক্ষের মুন্সির উপস্থিতিতে জায়গা পরিমাপের ভিক্তিতে গত ২৮ অক্টোবর মন্দিরের জায়গা মন্দিরপক্ষ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত কাগজে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর রযেছে। তাদের পক্ষ বাবুল ও উত্তমের স্বাক্ষর আছে। তিনি বলেন, মূলত বাবুল একজন ভালো লোক। উত্তমের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে।