
পরীক্ষা হলে অন্য শিক্ষার্থী থেকে দেখে লিখতে বাধা দেয়ার কারণে চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের এক শিক্ষক লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ নেতা কাজী নাঈম। তিনি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। গত ৯ই ফেব্রুয়ারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার হলে এ ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
লাঞ্ছিত ওই শিক্ষকের নাম মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আর ‘হুমকিদাতা’ কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনি খাওয়া, বঙ্গবন্ধুর ব্যানার ছিঁড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক অভিযোগ করলেও ‘সরি’ বলে দায়মুক্তির চেষ্টা করেছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
জানা গেছে, গত ৯ই ফেব্রুয়ারি সরকারি কমার্স কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজে। সেদিন এক ছাত্রকে অসদুপায় অবলম্বনে বারবার নিষেধ করেন হলে দায়িত্বরত হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মুজাহিদুল ইসলাম। এর ঘণ্টাখানেক পর নিজ থেকে খাতা জমা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যায় ওই ছাত্র। এরপরই মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে ফের হলে ঢুকে। এ সময় ভরা পরীক্ষার হলে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম দায়িত্বরত শিক্ষককে পিটিয়ে বদলির হুমকিসহ বিভিন্ন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন ডিগ্রি প্রথমবর্ষের পরীক্ষা চলছিল। কমার্স কলেজের এক ছাত্র অন্যজন থেকে দেখে পরীক্ষায় লিখছিল। যেহেতু আমি দায়িত্বে ছিলাম, তাই আমি তাদের নিষেধ করি। কিন্তু তারা কোনোভাবেই কথা শুনছিল না। পরে আমি যখন কঠোরভাবে বারণ করি, তখন ওই ছাত্র ১ ঘণ্টা পর খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, খাতা জমা দেয়ার এক ঘণ্টা পর ছেলেটি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমকে নিয়ে আসে। তাদের সঙ্গে আরও ৮-১০ জন ছাত্র ছিল। নাঈম আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তাদের কেন লিখতে দেয়া হচ্ছে না?’ আমি বলি, ‘এভাবে পরীক্ষার হলে দেখে লেখার সুযোগ নেই।’ এরপর নাঈম আমাকে বলে, ‘আপনি লিখতে দেবেন কিনা?’ আমি বলি, ‘পারবো না’। এরপর নাঈম বলে, ‘আপনাকে মেরে কলেজ থেকে ট্রান্সফার করবো’। এই সময় আরও কিছু অশালীন কথা বলে সে চলে যায়। তিনি বলেন, ঘটনার পর আমরা শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রিন্সিপাল স্যারকে মৌখিক অভিযোগ করি। স্যার (গত রোববার) নাঈমকে দিয়ে ‘সরি’ বলিয়ে পাঠিয়ে দেন। এমনকি এই ঘটনায় নাঈম আমাদের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সুবির দাশ স্যারকেও লাঞ্ছিত করেছিলেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম বলেন, সেদিন কমার্স কলেজ থেকে আমাদের কিছু সাংগঠনিক ছেলে ডিগ্রির পরীক্ষা দিতে মহসীন কলেজে এসেছিল। পরীক্ষার হলের ডিউটিতে মোজাহিদ স্যার ছিলেন। উনি একজন চিহ্নিত জামাত-শিবিরের লোক। তাই তিনি ইন্টেনশনালি আমাদের এক ছেলের খাতা নিয়ে নেন। পরে বিষয়টি আমাকে জানালে আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে বলতে বলি। আমি সেখানে যাইনি। কাউকে হুমকিও দেইনি। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা প্রপোগান্ডা মাত্র।