
চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে মুনতাকিম নামে এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগে সিএমপির পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (৪২) ও এসআই আবদুল আজিজের (৩৮) বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলাটির আবেদন করেন নির্যাতনের শিকার ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া যুবক সৈয়দ মোহাম্মদ মুনতাকিম (২৩)।
আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে সিআইডিকে কদন্তে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আগামী ২৭ মার্চ-২০২৩ ইং এর মধ্যে তদস্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মোস্তাকিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান জানান, পুলিশী হেফাজতে মোস্তাকিমকে নির্যাতনের অভিযোগে ওসিসহ ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলাটি আদালতে শুনানি হয়েছে। ভুক্তভোগী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুনানি শেষে আবেদনটি গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তে নির্দেশ দেন।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়,সৈয়দ মোস্তাকিম তার মাকে গত ৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করান। সম্প্রতি ডায়ালাইসিসের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তিনিসহ রোগীর স্বজনরা মিলে আন্দোলন করেন। গত ১০ জানুয়ারি তারা চমেক হাসপাতালের প্রধান গেইটে মানববন্ধন করেন। সে সময় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে ওসি নাজিম মোস্তাকিমকে আটক করে প্রথমে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিচে মারধর করেন। পরে থানায় নিয়ে তাকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। মারধরের সময় এসআই আবদুল আজিজ মোস্তাকিমকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের গালিগালাজ করে এবং মারধরের সময় এসআই আবদুল আজিজ মোস্তাকিমকে বলেন- ‘ওসি নাজিম স্যারের সাথে আর বেয়াদবি করবি?’
সে সময় ওসি নাজিম বলেন, ‘রিমান্ডে এনে থানায় পিটাতে হবে, তারপর বুঝবি পুলিশ কী জিনিস!’ এরপর থানায় ধরে এনে মারধরের বিষয়টি ফাঁস করলে মোস্তাকিমকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত জানুয়ারির শুরুর দিকে চমেক হাসপাতালে আন্দোলনে নামেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কয়েকদিন ধরে চলা ওই আন্দোলনে গত ১০ জানুয়ারি চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।
সেদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। বাগ-বিতণ্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হন। তিনি নিজের মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করেন ও তাদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে আন্দোলনকারীরা ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন ও ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।
সেসময় মোস্তাকিমও ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরইমধ্যে হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে চমেকের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান ওসি নাজিম উদ্দিন। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর এপিকের সামনে থেকে আরও একজনকে ধরে এনে ভেতরে নিয়ে যান ওসি নাজিম উদ্দিন। তখন বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন অন্য পুলিশ সদস্যরা।
একপর্যায়ে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। এতে মোস্তাকিমকে আসামি করা হয়।