ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে অবস্যবস্থাপনা, চরম বিশৃঙ্খলা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। এতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
মহান ২১ ফেব্রুয়ারী ও আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে লোকজন আসতে শুরু করে। সরকারি-বেসরকারি, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ফুল হাতে আসেন শহীদ মিনারে।
শহীদ মিনারের বেদির দিকে একে একে ফুল হাতে এগিয়ে যান সবাই। পুলিশের সশস্ত্র অভিবাদনের মধ্য দিয়ে রাত ১২টা ১মিনিটে শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা।

এর পরপরই শহীদ বেদিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তাদের বিশৃঙ্খলার কারণে সিএমপি কমিশনার ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শ্রদ্ধা জানাতে বেগ পেতে হয়। পুলিশ অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের ধাক্কা দিয়ে শহীদ বেদি থেকে নামিয়ে দেন।
এ ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী পেশাজীবী নেতা সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এ ধরণের বিশৃঙ্খলা হুড়াহুড়ি কাম্য নয়। এটি জাতির জন্য লজ্জাকর। অতীতে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে এমন ঘটনা ঘটেনি।
পরে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনারে প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেকমন্ত্রী ইঞ্জিনয়ার মোশাররফ হোসেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুদ্দিন, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, এবং মহানগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোজাফফর আহমেদ।
ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্র ইউনিয়ন ৫ জন নেতাকর্মী আহত:
এদিকে আজ মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণের অস্থায়ী শহিদ মিনারে ফুল দিতে গেলে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এতে ছাত্র ইউনিয়ন ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, ছাত্র ইউনিয়ন কোতোয়ালী থানার সাধারণ সম্পাদক এস এম নাবিল, পাহাড়তলী থানার সভাপতি ডেনি বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক বর্ষা দেবী, হালিশহরের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান আরিফ। এদের বাঁচাতে গিয়ে আহত হন চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ইমরান চৌধুরী।
ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ইমরান চৌধুরী বলেন, শহীদ মিনারে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ফুল দিতে যায়। সেখানে সারিবদ্ধভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন। আমরাও সিরিয়াল অনুযায়ী ফুল দিতে যাচ্ছি। মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সিরিয়াল ছাড়া ফুল দিতে দেওয়া হচ্ছিল।

তিনি আরও বলেন, সিরিয়াল ভঙ্গ করে ঢোকার সময় বাঁধা দেওয়ায় ও বেদিতে জুতা নিয়ে উঠার প্রতিবাদ করায় ছাত্র ইউনিয়নের ওপর কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হামলা চালায়। এ হামলায় চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের নারী সহযোদ্ধাসহ ১০-১২ জন আহত হন।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা ভাষা শহীদের স্মরণার্থে যে কর্মসূচি ছিল সেটি পালন করে চলে এসেছি। পরে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা শহীদ মিনারের বিশৃঙ্খল পরিবেশের কিছু ছবি পাঠিয়েছেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে দেখেছি তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়।