
সারা দেশে তাপপ্রবাহ চলছে। প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। এতে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। এর মধ্যেই টানা তিন দিন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা দেশে যন্ত্রণাদায়ক লোডশেডিং বাড়ায় এই অর্জন মøান হতে বসেছে। রমজান মাসে এমন লোডশেডিংয়ে অসহায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভ্ক্তুভোগীরা।
জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক নতুন কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসা ও গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধিতে গত মাস থেকে চাহিদার কাছাকাছি ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন। এতে লোডশেডিং হলেও তা ছিল ন্যূনতম পর্যায়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে চাহিদা বেড়েছে।
অন্যদিকে জ্বালানি সংকটে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সারা দেশে লোডশেডিং বেড়েছে। রাজধানীতে ২-৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও ঢাকার বাইরের কোথাও কোথাও ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এতে সেচ কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এই গরমে বিদ্যুৎ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মানুষ। ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আর বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার পরিস্থিতি গতবারের মতো হবে না। জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। গরম প্রচণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ ১৬ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন বাড়িয়েও ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। ১ হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গরম কমে গেলে এই সমস্যা থাকবে না।
গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। এর আগের দিন বুধবার উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৪ হাজার ৯৩২ মেগাওয়াট এবং তার আগের দিন মঙ্গলবার ছিল রেকর্ড ১৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট।
জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকেই লোডশেডিং বেড়েছে। পিডিবি ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের কথা বললেও বাস্তবে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করছে।
গত কয়েক দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় এসি ও ফ্যান বেশি চলছে। পাশাপাশি রমজান ও সেচ মৌসুম চলার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা এক লাফে অনেক বেড়েছে। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এই অবস্থা চলবে আরও কয়েক দিন। ফলে উৎপাদন না বাড়লে সমান তালে চলবে লোডশেডিংও। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চেষ্টা করছে বিপিডিবি।
জানা গেছে, রামপাল, আশুগঞ্জ নর্থ ও আশুগঞ্জ ইস্ট-এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি ত্রুটির কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এ তিনটি কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ঢাকায় এলাকাভেদে দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান সময়ের আলোকে জানান, ডিপিডিসি এলাকায় চাহিদা অনেক বেড়েছে, লোডশেডিং নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ ও সঞ্চালন সমস্যার কারণে লোডশেডিং করতে হয়েছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাওসার আমীর আলী বলেন, ‘অতিরিক্ত চাহিদার কারণে আমাদের বিতরণ এলাকায় দিনের বেলা এক-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম. শামসুল আলম বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাওয়ার প্ল্যান্ট থাকলেও ডলার সংকটের কারণে সরকার জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। যার কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ভোক্তাদের কথা ভেবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা প্রয়োজন।
বিপিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ পরিদফতর) মো. শামীম হাসান বলেন, প্রচণ্ড গরমের জন্য মানুষ এসি ও ফ্যানের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ঈদ সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের সব জায়গার বিপণি বিতানগুলোতে এসি চালানো হচ্ছে। সে জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে জন্য অল্প কিছু লোডশেডিং করতে হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির কাজ চলছে। গরম কমে গেলে আর সমস্যা হবে না। এ ছাড়া রামপালসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর তুলনায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকায় লোডশেডিং বেশি। গ্রামাঞ্চলে দিনে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।