
আবুল বাশার নয়ন, বান্দরবান :
একসময়ের সবুজে ঘেরা সাঙ্গু বন বিভাগের আওতাধীন রির্জাভ বন আর সরকারী খাস ভূমি এখন নেড়া পাহাড়। বনজ সম্পদ লুটের পর এখন সেখানে চলছে ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা। গত প্রায় এক বছর ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের আলীক্ষ্যং এলাকায় এই ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ এবং প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট করে এই ভূমি দখল করছে। তবে এই বন যাদের দেখভালের কথা তারা দুষছেন একে অপরকে। বন বিভাগ বলছে, সীমানা চিহ্নিত না থাকায় স্থানীয় একটি মহল সুযোগ নিয়েছে। আর মৌজা হেডম্যানের অভিযোগ বন বিভাগের ব্যর্থতার কারনে বন ও ভূমি বেদখল হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসনক। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে বন বিভাগের একটি টিম। অন্যদিকে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
ভূমি বেদখল প্রসঙ্গে বাইশারী ইউনিয়নের ২৮০নং আলীক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান মংথোয়াইহ্লা মার্মা বলেন, চট্টগ্রামের ফোর এইচ গ্রুপ নামে একটি কোম্পানীকে মসল্লা বাগান করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম, জামায়াত নেতা রফিক বশরী, কয়েকজন ইউপি মেম্বারসহ ১২জনের একটি সিন্ডিকেট অন্য জায়গার ভূয়া কাগজ প্রদর্শণ করে সরকারী ভূমি দখলে লিপ্ত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি পার্বত্যমন্ত্রীর সুপারিশ সহকারে উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ফোর এইচ গ্রুপ জায়গা কিনে সেখানে বাগান করছে বলে শুনেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আলিক্ষ্যং এলাকায় একসময় বন বিভাগের সংরক্ষিত বন ছিল, গাছ গাছালি ছিল। কয়েক বছর ধরে সেই জায়গা স্থানীয়রা দখল করছে। বিষয়টি তিনি আইন শৃংখলা সভায় তুলেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মংহ্লা অং মার্মা, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এসএনকে রিপনসহ একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গত কয়েকবছর ধরে ফোর এইচ গ্রুপকে জামায়াত নেতা রফিক বশরী বাগান করে দেওয়ার দায়িত্ব নেন। আর এই কাজে সাঙ্গু রেঞ্জের সাবেক এক বন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাইশারী ইউনিয়নের আলীক্ষ্যং ত্রিপুরা পাড়া লাগোয়া বেশ কয়েকটি সবুজ পাহাড়ে জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। চলছে পিলার স্থাপনসহ নানা কর্মযজ্ঞ। ২০১২সাল থেকে ভূমিগুলো বেদখল হতে শুরু করলেও মূলত গত বছর থেকে একটি কোম্পানীর লুলুপ দৃষ্টি পড়ে পাহাড়ে। আর সেই থেকে সরকারী ও প্রাকৃতিক বন কেটে আলিক্ষ্যং এলাকায় প্রায় ২৫০একর ভূমি দখল করে নিয়েছেন কোম্পানীটি। স্থানীয়রা জানান, গত বছর প্রায় দুইশ একর ভূমি দখল করা হয়েছিল। চলতি বছর আরো দুইশ একরের মতো ভূমি পরিষ্কার করে দখল করেছে। যদিওবা মৌজা হেডম্যানের দাবী প্রায় ৭শ একর ভূমি বেদখল হয়েছে। সরেজমিনে গেলে ওই কোম্পানির নিয়োজিত জনৈক ওয়াহেদ ও মো: নজির সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে সম্প্রতি জঙ্গল পরিষ্কারের সঙ্গে তাদের কোম্পানীর কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান।
বন বিভাগ ও স্থানীয় মৌজা হেডম্যানের তথ্যমতে, ২৮০ ও ২৮৫নং দুটি মৌজার ফারিখাল, গর্জনছড়া, চিকনছড়া, রাত গুড়া, তুতুবখালী, মিরঝিরি আগা, ডলুরঝিরি ও লেদুরছড়ায় ইতিমধ্যে ৭শ একর ভূমি দখল করেছে চক্রটি। তারা ভূয়া কাগজ সৃজন করে সরকারী ওই ভূমিতে রাবান বাগান, কাজু বাদাম, মসল্লা চাষ করেছে। আবার কেউ জঙ্গল পরিষ্কার করে নিজেদের দখলে রেখেছে। তবে এ বিষয়ে সরেজমিন গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও দখলকারীদের নিয়োজিত ম্যানেজার ক্যামরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি
এই প্রসঙ্গে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বলেন, সীমানা চিহ্নিত করণ না থাকায় দুষ্কৃতিকারীরা ভূমি দখলের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি এই ভূমির পরিস্থিতি দেখে এসেছেন বন বিভাগের একটি টিম। স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।